নির্বাচন না পেছানোর স্বার্থে বিএনপি আরও ছাড় দেবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তবে গণভোট আগে না নির্বাচনের দিন, এই দুই পক্ষেই অকাট্য যুক্তি দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। হ্যাঁ-না মতামতের জটিল বিষয় বুঝতে জনগণকে সময় দেয়া প্রয়োজন হলেও নির্বাচনের দিন গণভোট সরকারকে সাংবিধানিক সংকটে ফেলবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে ইগো থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান বিশ্লেষকদের।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জাতীয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া শহীদদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে। মাসের পর মাস রাজনৈতিক দলের বৈঠকগুলো বাজে খরচ হবে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের স্বার্থে সাংবিধানিক আদেশ, নোট অব ডিসেন্টসহ অনেক কিছুতেই বিএনপি ছাড় দেবে বলে মনে করেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আইনগত আদেশ দেয়ার এখতিয়ার প্রধান উপদেষ্টার নেই। এটা প্রেসিডেন্ট দিতে পারেন। উপদেষ্টা পরিষদ বিষয়টা চূড়ান্ত করার পরে এটা প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে আসলেও আমি কোনো সমস্যা দেখি না। সুতরাং, বিএনপি এ আইনগত আদেশের বিরোধিতা করবে না। যদিও এখন পর্যন্ত করছে। কারণ তাদের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক আমার মনে হয় যে নির্বাচনটা না পিছিয়ে যায়৷ সেটা ঠেকানোর জন্য তারা হয়তো শেষ পর্যন্ত এটা মেনে নিবে।’
আরও পড়ুন:
এদিকে গণভোট কোনভাবেই নভেম্বরের মধ্যে হওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ সাহান। সাংবিধানিক ৪৮টি বিষয় গণভোটে যাবার আগে তা নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণার জন্য নির্বাচনের দিনে গণভোট হওয়া অধিক যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আফিস সাহান বলেন, ‘আপনি ৪৮টা প্রস্তাবের একটি প্যাকেজ জনগণকে দিচ্ছেন। জনগণকে তো বুঝতে হবে আমি কিসের ওপর ভোট দিচ্ছি। আমি হ্যাঁ ভোট দিলে কি হবে আর না ভোট দিলে কি হবে এটা যদি আমি না বুঝি তাহলে তো ভোট দেয়ার কোনো অর্থ হয় না। এটা তো সিম্পল একটা এক্সারসাইজ হচ্ছে। এই কমপ্লিকেটেড বিষয় বুঝার জন্য জনগণকে সময় দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর জনগণের কাছে যেতে হবে, বলতে হবে এটা হচ্ছে ঘটনা। এর মাঝখানে সরকারের প্রস্তুতি ও নিতে হবে। এটা কি এক মাসের মধ্যে সম্ভব? আপনি যদি নভেম্বরের মধ্যেই এটা করেন তাহলে এর কোনো পারফেক্ট রেজাল্ট হবে না বরং রাজনৈতিক টুল হিসেবে ব্যবহৃত হবে।’
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের অস্তিত্ব সংবিধানে না থাকায় নির্বাচনের আগেই গণভোট অবশ্যই প্রয়োজন বলে মনে করেন আইনজীবী আবু হেনা রাজ্জাকী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট আবু হেনা রাজ্জাকী বলেন, ‘গণভোটে যখন পাঠান তখন নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে পাঠানো যায় না৷ নোট অব ডিসেন্ট একটা রাজনৈতিক দলের। আর গণভোট যখন দিবে তখন তা সব জনগণের। জনগণের প্রতিনিধি তো এখানে ছিলো না যখন জুলাই সনদ সাক্ষর হয়। সবাই যখন দাবি করেন জুলাই আন্দোলনের দাবিদার তখন জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি হতে দেরি হবে কেন? সংবিধানে কি অন্তর্বর্তী সরকারের কথা আছে? যে সরকারের কথা সংবিধানে নেই সে সংবিধান চালাবে কিভাবে? গণভোটটা আগে হলে তার যে আইনি ভিত্তিটা হবে তার আলোকে নির্বাচনটা হবে। আর যদি একই দিনে করেন তাহলে নির্বাচন কোন আইনে করবেন ক্লিয়ার করেন।’
তবে গণভোট অনুষ্ঠানের বিষয়ে যেহেতু সবাই একমত, রাজনৈতিক দলগুলোর একে অপরের ইগো সহসাই কেটে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে প্রত্যাশা বিশেষজ্ঞদের।





