১. স্বচ্ছতা
বেতনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা অবশ্যই শর্তবিহীন হতে হবে। কর্মীরা যেন জানতে পারে তাদের বেতন কিভাবে নির্ধারিত হয়েছে। কোথায় কোন খাতে অর্থ যোগ-বিয়োগ হচ্ছে এবং কোন কোন খাতে কর্মীরা বাড়তি ভাতা বা সুবিধাদি পাচ্ছেন। স্বচ্ছতা কর্মীদের কাজের পরিবেশকে মসৃণ করে তোলে। কারণ একজন কর্মী সবসময়ই চান তার কর্মক্ষেত্রের শর্তগুলো যেন স্বচ্ছ হয়।
স্বচ্ছতা। ছবি: সংগৃহীত
২. প্রযুক্তির ব্যবহার
একটা সময় ছিল যখন বেতন-মজুরি কিংবা আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়া ছিল সামনাসামনি। বর্তমানেও কিছু কিছু জায়গায় এই পদ্ধতির প্রচলন আছে। এই পদ্ধতিতে অনেক ধরনের ভুল-ভ্রান্তির সম্ভাবনা থাকে। প্রতিষ্ঠানের বেতন প্রদান প্রক্রিয়া কীভাবে হবে তার ওপরও নির্ভর করে কর্মীদের কাজের গতিশীলতা। বিষয়টি অনেকটা মনস্তাত্ত্বিক। এই যেমন ধরুন, সনাতন পদ্ধতিতে বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক সময় নির্ধারিত তারিখের হেরফের হতে পারে। আবার হিসেবের গরমিল এবং নিজের সঙ্গে নগদ অর্থ বহন করাটাও অনেকসময় ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই বেতন প্রদান পদ্ধতি যদি ব্যাংকের মাধ্যমে হয় তাহলে কর্মী নিরাপদে নিজের সুবিধা মত বেতন উত্তোলন করে নিতে পারেন। এছাড়া বেতন প্রদান পদ্ধতি স্বয়ংক্রিয় হলে বেতন প্রাপ্তির নির্ধারিত তারিখের হেরফের হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।
প্রযুক্তির ব্যবহার। ছবি: সংগৃহীত
৩. নিয়মিত অডিট
শ্রম আইন মেনে প্রতিষ্ঠানে বেতন, ওভারটাইম এবং অন্যান্য ভাতা দেয়া হচ্ছে কিনা, কর্মীরা কোথাও অসুবিধা অনুভব করছে কিনা- সে বিষয়ে নিয়মিত অডিট করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এই অডিটের কারণে প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি কমায়। সেই সঙ্গে কর্মী সন্তুষ্টির বিষয়টিও প্রাধান্য পায়।
নিয়মিত অডিট। ছবি: সংগৃহীত
৪. ধারণ এবং নতুন নিয়োগ
একটি সুপরিকল্পিত বেতন কাঠামো প্রতিষ্ঠানে বর্তমান কর্মচারীদের ধরে রাখার এবং নতুন প্রতিভাকে আকর্ষণ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে দক্ষ, ন্যায্য এবং প্রতিক্রিয়াশীল বেতনের কারণে প্রতিষ্ঠান তার পুরোনো কর্মচারীদের ধরে রাখা এবং নিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় সম্ভাবনা হতে পারে। বলা যায়, সুপরিকল্পিত বেতন কাঠামো এক ধরণের ব্র্যান্ডিং।
ধারণ এবং নতুন নিয়োগ। ছবি: সংগৃহীত
৫. প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নিজের পরিবার মনে করা
বেতনের বাইরে, একটি প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে কর্মীদের সন্তুষ্টি বাড়াতে পারে। বিশেষত বড় কোম্পানিগুলোয় শিক্ষা এবং চিকিৎসাখাতে আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার মাধ্যমে কর্মীদের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য গভীর প্রতিশ্রুতি প্রদান করে।
৬. নারী কর্মীদের সমানভাবে মূল্যায়ন
প্রতিষ্ঠানে কোন নারী কর্মী যদি পুরুষের সমান কাজ করেন তাহলে তাকে সমান পারিশ্রমিক দেয়া উচিত। নারী কর্মীরা যদি তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠান খুব বেশি আগাতে পারে না।
নারী কর্মীদের সমানভাবে মূল্যায়ন। ছবি: সংগৃহীত
৭. অপর্যাপ্ত বেতন ব্যবস্থার বিরূপ প্রতিক্রিয়া
একটি কার্যকর বেতন ব্যবস্থা শুধু একটি প্রশাসনিক হাতিয়ার নয়, বরং প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানও বটে। বিপরীতে, অপর্যাপ্ত বেতন ব্যবস্থা অগণিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যা প্রতিষ্ঠান এবং এর কর্মচারী উভয়ের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কার্যকারী বেতন ব্যবস্থা না থাকলে যে ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে-
অপর্যাপ্ত বেতন ব্যবস্থার বিরূপ প্রতিক্রিয়া। ছবি: সংগৃহীত
কর্মীদের মনোবল হ্রাস: বিলম্বিত বা ভুল বেতন প্রদান অসন্তোষ এবং কর্মচারী মনোবল হ্রাস হতে পারে।
কর্মীদের মনোবল হ্রাস। ছবি: সংগৃহীত
আইনি সমস্যা: কর আইন এবং শ্রম আইন মেনে চলতে ব্যর্থতার কারণে প্রতিষ্ঠানের আইনি জরিমানা এবং আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।
আইনি সমস্যা। ছবি: সংগৃহীত
আর্থিক ত্রুটি: অপর্যাপ্ত বেতন ব্যবস্থার কারণে আর্থিক প্রতিবেদনে ত্রুটি দেখা দিতে পারে। যা বাজেট এবং আর্থিক পরিকল্পনাকে প্রভাবিত করে।
আর্থিক ত্রুটি। ছবি: সংগৃহীত
প্রশাসনিক বোঝা: বেতন প্রক্রিয়াকরণে অদক্ষতা কর্মীদের উপর কাজের চাপ বাড়াতে পারে।যার ফলে কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি এবং কাজে ত্রুটি হতে পারে।
প্রশাসনিক বোঝা। ছবি: সংগৃহীত
সুনামহানি: অসামঞ্জস্যপূর্ণ বেতনের কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলো অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিকভাবে চাকরির বাজারে কোম্পানির খ্যাতি নষ্ট করতে পারে।
সুনামহানি। ছবি: সংগৃহীত
সংক্ষেপে বলা যায়, অপর্যাপ্ত বেতন ব্যবস্থা সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই উপযুক্ত বেতন কাঠামোর মাধ্যমে কর্মীদের কাজে যেমন গতিশীলতা আনে তেমনি প্রতিষ্ঠানের ছোট-বড় অনেক সমস্যা সমাধানেও ভূমিকা রাখে।
তথ্যসূত্র: অন্ট্রোপ্রেনিওর.কম