তীর-ধনুকে নিশানাবাজি দুর্দান্ত, কিন্তু জগত সংসারের দায় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই তো খেলার নেশা ছেড়ে ভিন্ন কোন পেশায় মন দিতে চান আর্চার রোমান সানা। বাংলাদেশকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম পদক এনে দেয়া, অলিম্পিকে সরাসরি কোয়ালিফাই করার সব গৌরব পেটের দায়ের কাছে মলিন হয়ে যায়।
কীর্তিমান এই আর্চারের হাত ধরে বিশ্বদরবারে অনেকবার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। তবু তাকে যথাযোগ্য সম্মান কিংবা সম্মানী, কোনটাই দিতে পারেনি ফেডারেশন। ফলে জাতীয় দলের হয়ে আর না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রোমান সানা।
শুধু আর্চারিই নয়, অন্য খেলাধুলায় যারা আছেন, তারা কেমন আছেন?
শ্যুটার শাকিল আহমেদের কমনওয়েলথ ও এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপসহ ১০টি আন্তর্জাতিক পদক আছে। অথচ খেলোয়াড় হিসেবে ফেডারেশন থেকে কখনও বেতন পাননি তিনি। বর্তমানে খেলার পাশাপাশি কোচিং করাচ্ছেন, সে হিসেবে ফেডারেশন থেকে পাচ্ছেন সম্মানী। তবে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া মাসিক বেতনটাই তার জীবিকা নির্বাহের উৎস।
শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের মাসিক কোনো স্যালারি নেই। কোনো ইভেন্টে ভালো করলে সম্মানী দেয়া হয়। তবে মাসিক ভিত্তিতে আমাদের যদি বেতন দেয়া হয় তাহলে খেলোয়াড়রা ভালো থাকবেন।’
২০১৯ সালে এসএ গেমসে স্বর্ণপদক জিতেছেন হুমায়রা অন্তরা। এরপর নানা আশ্বাস পেয়েছেন, আশায় স্বপ্ন বুনেছেন, কিন্তু জীবনের চিত্র বদলায়নি। এই কারাতেকা বলেন, ‘আমি প্রফেশনাল প্লেয়ার কিন্তু আমার মাসিক যে সম্মানী আসে সেটা প্রফেশনাল না। প্লেয়ারদের অবস্থা সবসময়ই খারাপ, এখানে যারা খেলছে তারা শুধুই ভালোবাসার জায়গা থেকে আসে।’
শাকিল কিংবা অন্তরারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পদক জয়ের পরও নিজেদের পরিবার ও সংসার চালাতে হিমশিম খান। দৈনন্দিন জীবনে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন।
কেবল শ্যুটিং কিংবা কারাতে নয়, ক্রিকেট ছাড়া বাংলাদেশের আর কোন খেলাতেই বেতন দেয়া হয় না। এর মধ্যে ফুটবলাররা লিগ খেলে মোটা অংকের অর্থ উপার্জন করেন। ক্রিকেটার-ফুটবলার ছাড়া বাকি সবাইকে তাকিয়ে থাকতে হয় সার্ভিসেস সংস্থাগুলোর দিকে।
আর্থিক নিশ্চয়তা না থাকলে খেলোয়াড়দের হতাশা যতটা বাড়ে, সাফল্যের সম্ভাবনা ততটাই কমে। সবই জানেন সংগঠকরা, তবে আর্থিক সংকটের দোহাই দিয়ে পার পেতে চান তারা।
ক্রীড়া সংগঠক মুশতাক ওয়াইজ বলেন, ‘প্রত্যেকটা ফেডারেশনেই কিছু অভ্যন্তরীণ সীমাবদ্ধতা থাকে। বিশেষ করে, সেটি অর্থনৈতিক সংকট। আর যেহেতু এই সংকট আছে তখন সবাইকে কষ্ট করতে হয়।’
তবে ফেডারেশন কর্তাদের সদিচ্ছা কতটুকু আছে এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।