নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া কোনো চুক্তিতেই রাজি নয় ইউক্রেন

0

ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও ন্যাটোর সদস্য পদের বিনিময়ে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে রাজি বলে জানিয়েছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার অভিমত, যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া কোনো চুক্তিতেই রাজি নয় কিয়েভ। এদিকে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে কানাডায় বিক্ষোভ করেছে শত শত মানুষ। এছাড়াও ইউক্রেন সংকট নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘ।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান তিন বছর শেষ করে চতুর্থ বর্ষে এসেও সমাধানের মুখ দেখেনি। এ সময়ে হতাহতের সংখ্যা ৪৫ হাজার ছাড়িয়েছে। তাদের স্মরণে ‘স্মৃতির আলো’ নামে লাভিভ শহরের সমাধিস্থল আলোকিত করা হয়।

এছাড়াও বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবনগুলো রাঙানো হয় ইউক্রেনের পতাকার রঙে। যুদ্ধ শুরুর পর এই জোট থেকে ইউক্রেন প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ইউরোর সামরিক সহায়তা পেয়েছে।

এদিকে ক্ষমতায় বসেই যুদ্ধ বন্ধে নানা তৎপরতা শুরু করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৯ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে স্বৈরাচার বলেও ব্যক্তিগত আক্রমণে বিদ্ধ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এছাড়া, ইউক্রেনকে এ পর্যন্ত দেয়া বিপুল পরিমাণ সামরিক সহায়তার বিনিময় বিরল খনিজ সম্পদ চেয়ে একটি চুক্তির প্রস্তাবও দেন ট্রাম্প। জবাবে জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়ার আক্রমণ থামানোর নিশ্চয়তা দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। এরপরই খনিজ সম্পদ দিতে প্রস্তুত হবে কিয়েভ।

গেল রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেনের নিরাপত্তার দিকে নজর তার। এই মুহূর্তে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য পদ পেলে প্রয়োজনে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে রাজি তিনি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যেকোনো পদক্ষেপ নিতে রাজি আছি। এমনকি প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তেও আপত্তি নেই। তবে এর আগে ইউক্রেনকে ন্যাটোয় যুক্ত করতে হবে। এর জন্য দীর্ঘ সময়েরও প্রয়োজন হবে না।’

জেলেনস্কির বিশ্বাস, যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সবকিছুর সমাধান দেখছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে ইউক্রেনের স্বার্থরক্ষা ছাড়া যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কোনো ধরনের চুক্তি মেনে নেয়া হবেনা বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ভাবছে যুদ্ধবিরতি মানেই যুদ্ধের সমাপ্তি এবং এটিকে বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখছে বিশ্ববাসী। তাদের ধারণা এর মাধ্যমে পুনরায় যুদ্ধ শুরুর ঝুঁকি নেবেন না পুতিন। আমাদের বিশ্বাস সবকিছুর আগে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কেবল যুদ্ধবিরতিতে একমত হওয়া সহজ ব্যাপার না। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’

এদিকে ইউক্রেনের পক্ষে কানাডার টরন্টোর নাথান ফিলিপস স্কয়ারে বিক্ষোভ করেছেন শত শত মানুষ। শান্তি আলোচনায় সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও জানান তারা।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে কোনও ধরনের আলোচনা ফলপ্রসূ হবে না। ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি সব পক্ষকে একসঙ্গে নিয়ে বসার জন্য।’

অন্য একজন স্থানীয় বলেন, ‘গোটা বিশ্বের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা প্রেমী মানুষের জন্য অবিশ্বাস্য উদাহরণ জেলেনস্কি। তার সাহস ও দৃঢ়তা দেখে মুগ্ধ।’

কানাডার একজন বলেন, ‘এখানে অনেক ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। সংকট সমাধানে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সরাসরি আলোচনা হওয়া দরকার।’

ইউক্রেন সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশন ডাকা হয়েছে। যেখানে দুটি খসড়া প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হতে পারে। ইউক্রেনে চলমান সংঘাত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন নেতারা।

এসএস