শক আসে, দশক যায়, তবে নানা ইস্যুতে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার যেন কোন শেষ নেই। ৯০ এর দশক পর্যন্ত পরমাণু বোমা তৈরি, মহাকাশ অভিযান, এমনকি সমাজতান্ত্রিক বনাম পুঁজিবাদী মতাদর্শ প্রচারের মতো বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় জড়ায় তৎকালীন মহাশক্তিধর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৯১ সালে সোভিয়েতের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সামনে আসে চীন। দুই দেশের স্নায়ুযুদ্ধ চলেছে অলিম্পিক ময়দান থেকে শুরু করে মহাকাশ কেন্দ্র পর্যন্ত। এবার নতুন প্রতিযোগিতা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে।
২০২২ সালের শেষভাগে চ্যাটজিপিটি তৈরি করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেয় ওপেন এআই। মানুষের মতো কথোপকথনে সক্ষমতার কারণে মার্কিন প্রযুক্তি নির্মাতার চ্যাটবটটিতে বাড়তে থাকে বিনিয়োগ। একই রকম চ্যাটবট তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে মেটা ও গুগলের মতো অন্যান্য মার্কিন প্রতিষ্ঠান। তবে মার্কিন শ্রেষ্ঠত্বকে চুরমার করে দেয় ডিপসিক। চীনা প্রতিষ্ঠানটির এআইয়ের সক্ষমতা অন্যান্য চ্যাটবটের তুলনায় বেশি। পাশাপাশি নির্মাণ খরচও দশভাগের একভাগ।
এমন পরিস্থিতিতে, সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতিযোগিতায় অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়তে পারে মানবজাতি। অনলাইনে আসল ও নকলের মধ্যে ফারাক বের করা দূরূহ হয়ে পড়বে। বাড়বে অপরাধ, ঝুঁকিতে পড়বে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা। পাশাপাশি চাকরি হারানোর শঙ্কা তো রয়েছেই। এমন পরিস্থিতিতে এই খাতে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ প্রতিযোগিতার ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
চায়না সেন্টার ফর ইকোনমিক রিসার্চের অধ্যাপক ইয়াও ইয়াং বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র পিছনে ফিরে চীনকে সহযোগিতা করবে, আমি এমন আশা করি না। তবে অন্তত প্রতিযোগিতাটি শান্তিপূর্ণ হতে হবে। এতে বিধি-বিধান যুক্ত করতে হবে। অপরপক্ষকে প্রতিযোগিতা থেকে বাইরে ঠেলে দিয়ে আপনি কখনোই নিজের উন্নতি করতে পারবেন না।’
এআই এর গডফাদার হিসেবে খ্যাত জিওফ্রে হিনটন। তবে মার্কিন এই গবেষকও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অসংখ্যবার। এখন দেখার বিষয়, এআই এর ঝুঁকি মোকাবিলায় কী পদক্ষেপ নেয় ট্রাম্প প্রশাসন।