ক্ষমতায় বসার আগেই একের পর এক হুমকি দিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একাধিক দেশ ও অঞ্চল দখল থেকে শুরু করে বিদেশি পণ্যে বিশাল অঙ্কের শুল্কারোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। মার্কিন অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে চান ট্রাম্প। মার্কিন পণ্য ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন পণ্য আমদানির ওপর শুল্কারোপ করতে যাচ্ছেন রিপাবলিকান এই নেতা।
ট্রাম্পের এমন উদ্যোগে এরইমধ্যে শঙ্কায় পড়েছেন চীন, কানাডা, মেক্সিকোসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে বিশ্বব্যাপী বাড়তে পারে পণ্যের দাম।
কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ঈশ্বর প্রসাদ বলেন, ‘মার্কিন অর্থনীতির জন্য রপ্তানি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এতে প্রবৃদ্ধির গতি কতটা বাড়বে তা নির্দিষ্ট নয়। শুল্ক বাড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্যান্য দেশের বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অন্য দেশগুলো বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। যাদের ওপর শুল্কারোপ করা হচ্ছে সেসব দেশ ট্রাম্পের সঙ্গে দর কষাকষির চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।’
ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী আমদানি পণ্যে ১০ শতাংশ এবং চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছেন। এছাড়া কানাডা ও মেক্সিকান পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক হবে ২৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে মুক্ত বাণিজ্য বাধার মুখে পড়বে এবং বাড়বে উৎপাদন খরচ।
পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্সের সিনিয়র ফেলো মেরি লাভলি বলেন, ‘চীনের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্কারোপ করলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য। এছাড়া গাড়ির যন্ত্রাংশ, রাসায়নিক, ওষুধের কাঁচামাল, ভোক্তা ও গৃহস্থালি পণ্য, জুতা এবং খেলনা সামগ্রী ক্ষতির মুখে পড়বে। শুল্কের অতিরিক্ত খরচ মার্কিন আমদানিকারক ও ভোক্তাদের বহন করতে হবে।‘
এদিকে, ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপে মার্কিন ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের খেলনার বাজারের সিংহভাগ আমদানি নির্ভর। শুল্কারোপে ধস নামবে এ খাতে।
বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিকদের মতেও শুল্কারোপে জিনিসের দাম বাড়বে। তবে কিছু ব্যবসায়ী বলছেন এতে প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি হবে। লাভের মুখ দেখবে মার্কিন কোম্পানিগুলো ।
এক নাগরিক বলেন, ‘৬০ শতাংশ শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত বিধ্বংসী। যা আশেপাশের দেশকেও প্রভাবিত করবে। এতে ২০% থেকে ২৫% খরচ বাড়বে।’
আরেকজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের ৩ শতাংশ অভ্যন্তরীণভাবেই উৎপাদন হয়। সেটি বাড়িয়ে দ্বিগুণ করলে শুল্ক বৃদ্ধি খুব একটা প্রভাব ফেলবে না।’
ইইউসহ মার্কিন বাণিজ্যিক অংশীদারদের সব পণ্যের ওপর ১০ থেকে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্কারোপের হুমকিতে অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়তে পারে ইউরোপ। ইউরোপীয়দের মতে, এতে পণ্যের দাম বাড়বে বহুগুণ।
এদিকে, মেক্সিকো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজছে। মেক্সিকোর অর্থমন্ত্রীর মতে, ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে খোদ মার্কিন অর্থনীতিই বিপাকে পড়বে।
মেক্সিকোর অর্থমন্ত্রী মার্সেলো এব্রাড বলেন, ‘মেক্সিকো ও চীনের ওপর একইসঙ্গে শুল্কারোপ করলে যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন অসম্ভব। এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মেক্সিকোর ক্ষেত্রে কাঠামোগতভাবে শুল্কারোপ সম্ভব না। যা মেক্সিকোর জন্য একটি সুবিধাজনক দিক।’
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনায় বাড়বে মুদ্রাস্ফীতি। এমনকি পণ্য সরবরাহে বাধা সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম লঙ্ঘন হবে বলেও আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।