রাজনৈতিক অস্থিরতায় টালমাটাল কানাডা। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা জাস্টিন ট্রূডো এবার কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। পার্লামেন্টে ট্রুডোর দল লিবারেল পার্টির আসন সংখ্যাও কম।
যেকোনো সিদ্ধান্তের জন্য নির্ভর করতে হয় অন্য দলের সমর্থনের ওপর। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায়, লিবারেলদের প্রতি জনগণের সমর্থন মাত্র ২৩ শতাংশ। অন্যদিকে রক্ষণশীলদের পক্ষে ৪৩ শতাংশ এবং বামপন্থিদের দিকে পাল্লা ভারি ২০ শতাংশ মানুষের।
৬২ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের আর্থিক ঘাটতি নিয়ে আগে থেকেই চাপে ছিল ট্রুডো সরকার। এরপর মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসে ট্রাম্পের শুল্কনীতি। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই অর্থমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডকে সরিয়ে দেয়া হয়। এমনিতেই জীবনযাত্রার খরচ বাড়ায় কানাডাবাসীর আস্থা হারাতে থাকেন জাস্টিন ট্রুডো।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার পার্লামেন্টের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিনে তোপের মুখে পরেন ট্রুডো। তার পদত্যাগের দাবিতে পার্লামেন্টের ভেতরেই বিতর্কে জড়ান বিরোধীদলীয় নেতারা। ট্রুডোর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আয়োজনের দাবি তোলেন তারা।
রক্ষণশীল দলের সংসদ সদস্য মাইকেল কুপার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো কানাডিয়ানদের আস্থা হারিয়েছেন। তার সরকারের অনেক এমপিও আস্থা হারিয়েছেন জনগণের। অবাক হওয়ার কিছু নেই। গেল ৯ বছরে দেশের সবকিছু ভেঙে দিয়েছেন ট্রুডো। অভিবাসন, সীমান্ত নীতিসহ আবাসন খাতকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।’
নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা জগমীত সিং বলেন, ‘মানুষের ক্ষোভ বাড়া খুবই স্বাভাবিক। তারা এমন একজন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে আছেন যিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কানাডিয়ানদের সুরক্ষা দিতে পারছেন না। তার কাছে নিজের গদি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী তার ব্যর্থতা স্বীকার করছেন না।’
ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে বিরোধের জেরে ট্রুডোর দীর্ঘ দিনের সঙ্গী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডকে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন। পরে উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকেও সরে দাঁড়ান তিনি। এছাড়া, ট্রুডো অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মার্ক কার্নিকেও সরিয়ে দেয়ার গুঞ্জন উঠে। এবার ট্রুডোর নিজ দল লিবারেল পার্টির পদ থেকে পদত্যাগের দাবি উঠেছে।
এদিকে, নতুন অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব পেয়ে ট্রুডোর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডিমিনিক লেব্ল্যাঙ্ক বলেন, কানাডাবাসীর জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবেন তিনি।
নিজ দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করে জাস্টিন ট্রুডো বলেন, মন্ত্রিসভাও একটি পরিবারের মতো। আর মাঝে মাঝে এখানেও কলহ হয়ে থাকে। আমরা নিজেরাই সমাধানের একটা পথ খুঁজে বের করবো।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘পরিবারের মধ্যে অনেক বিষয় নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। মাঝে মাঝে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কলহ হয়। আমরা একটা বড় পরিবার। সবাই এখানে পরিবারের মতো। আমাদের নিজেদের মধ্যে একটি উপায় খুঁজতে হবে।’
এদিকে, ট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কনীতির হুমকিতে নতুন সীমান্ত নীতি ঘোষণা করেছে কানাডা সরকার। সীমান্তের নজরদারি বাড়ানোসহ অপরাধ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে স্ট্রাইক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। কারণ ট্রাম্পের শর্ত ছিল সীমান্তে মাদক কারবার ও অভিবাসী ঢল থামাতে হবে।
২০২৫ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে কানাডায় সাধারণ নির্বাচন হতে পারে। তবে যত দিন যাচ্ছে ততই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে ট্রুডোর দল। হাউস অব কমন্সের পরের অধিবেশন বসবে আগামী ২৭ জানুয়ারি। ট্রুডোর ওপর অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ফেব্রুয়ারির শেষ বা মার্চ পর্যন্ত।