উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

ইসরাইলপন্থি মন্ত্রিসভা দেখে হতাশ মার্কিন মুসলিমরা

গাজা-লেবাননে ইসরাইলি আগ্রাসনে সমর্থন দেয়ায় ক্ষোভে বাইডেন প্রশাসন থেকে মুখ ফিরিয়ে ভোট দিয়েছিলেন ট্রাম্পকে। সপ্তাহ খানেকের মাথায় নবনির্বাচিত সরকারের ইসরাইলপন্থি মন্ত্রিসভা দেখে হতাশায় ভেঙে পড়েছেন ট্রাম্পকে ভোট দেয়া মুসলিমরা।

যুক্তরাষ্ট্রে আরব-আমেরিকানদের রাজধানী হিসেবে পরিচিত মিশিগান, ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যেটি ছিল অন্যতম সুইং স্টেট বা প্রতিযোগিতাপূর্ণ অঙ্গরাজ্য।

ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন মুসলিম ভোটাররা ডেমোক্র্যাট সমর্থক হলেও এবার ভিন্ন ছিল দৃশ্যপট। পরামর্শক সংস্থা কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্সের আগস্ট মাসের এক জরিপে জানা গিয়েছিল, ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এবং বর্তমান বাইডেন প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল মিশিগানের ৮৮ শতাংশ মুসলিম ভোটার।

মিশিগানের স্থানীয় একজন বলেন, ‘মিশিগানে দুই লাখ মুসলিম-আমেরিকান ভোটার আছেন। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে মিশিগানে ভোটের ফল পাল্টে দিতে তারাই সাহায্য করেছেন। ডেমোক্র্যাটরা হুঁশিয়ারি আমলে নেয়নি।’

এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় আগ্রাসনে প্রায় ৪৪ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল, লেবাননে গেলো দু'মাসে এ সংখ্যা প্রায় চার হাজার। হাজার হাজার শিশুর মর্মান্তিক প্রাণহানি পুরো বিশ্বকে কাঁদালেও ইসরাইলকে থামাতে পারেনি ঘনিষ্ঠতম মিত্র ইসরাইল, বরং বারবার জানিয়েছে জোরদার সমর্থন।

এ নিয়ে মার্কিন ভূখণ্ডে বারবার মুসলিমরা ক্ষোভে ফেটে পড়লেও নির্লিপ্ত ছিল বাইডেন প্রশাসন। ভোটে যার মাশুল গুণেছেন কামালা, লাভবান হয়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

একজন ভোটার বলেন, ‘ভোটের ফলে আমি খুব হতাশ। কিন্তু এমনটাই হওয়ার ছিল। ইসরাইল-গাজা ইস্যুতে অবস্থানে বড় পরিবর্তন না আনলে যে এর ফল ভোগ করতেই হবে, তা ডেমোক্র্যাটদের বোঝা উচিত ছিল।’

কিন্তু ট্রাম্পকে জিততে সহযোগিতা করেও হালে পানি পাচ্ছেন না মুসলিমরা। নতুন সরকার গোছাতে এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যাদের নাম ঘোষণা করেছেন, সে তালিকায় ইসরাইলপন্থি অনেক নাম হতাশ করেছে আরব-আমেরিকানদের।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া রিপাবলিকান সিনেটর মার্কো রুবিও পরিচিত কট্টর ইসরাইলপন্থি হিসেবে। গাজায় অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানাবেন না এবং হামাসকে নির্মূলে বিশ্বাসী বলে বছরের শুরুতেই জানিয়েছিলেন তিনি। ইসরাইলে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন রাষ্ট্রদূত হবেন মাইক হুকাবি।

সাবেক আরকানসাস গভর্নর এবং কট্টর ইসরাইলপন্থি রক্ষণশীল এই রাজনীতিবিদ পশ্চিম তীরে ইসরাইলের বসতি সম্প্রসারণের পক্ষে এবং ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকটের দ্বিপাক্ষিক সমাধানের বিরুদ্ধে। জাতিসংঘে ট্রাম্পের নতুন রাষ্ট্রদূত হবেন এলিজে স্টেফানিক, যিনি গাজা হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানানোয় জাতিসংঘকে আখ্যা দিয়েছিলেন ইহুদিবিদ্বেষী বলে।

যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নেতারা বলছেন, ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দেয়া মুসলিম ভোটাররা সামান্য হলেও আশা করেছিলেন যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করবেন তিনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো লক্ষণই দৃশ্যমান নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের নিরঙ্কুশ বিজয় মধ্যপ্রাচ্যে রাজনীতির নতুন সমীকরণ তৈরি করবে- তা আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল।

চ্যাথাম হাউজ থিংকট্যাংকের পরিচালক ও নির্বাহী ব্রনওয়েন ম্যাডক্স বলেন, ‘ট্রাম্প বরাবরই ইসরাইলের বড় সমর্থক। সবসময় তিনি নেতানিয়াহুর পক্ষে কথা না বললেও আমি নিশ্চিত যে হোয়াইট হাউজে কামালা হ্যারিসের পরিবর্তে ট্রাম্পের আগমন সন্তুষ্ট করেছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে। আমি জানি না এ সম্পর্ক কোনদিকে যাবে। জো বাইডেন আরও আড়াই মাস ক্ষমতায় আছেন। ট্রাম্প চাইলে ভালো কিছুও করতে পারেন, বা আরও খারাপ দিকেও যেতে পারেন।’

ট্রাম্পের আমলে ইসরাইল পশ্চিম তীর আত্মসাৎ করলে, গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিলে এবং ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করলে অবাক হওয়ার কিছু নেই বলে মত অনেকের। বিগত মেয়াদে ক্ষমতায় আসার এক বছরের মাথায় পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

এসএস