ইহুদিদের ওপর হলোকাস্টের পর গেলো বছরের ৭ অক্টোবর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে ইসরাইলকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন ইসরাইলের পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্র। সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস নির্মূলের। সেসময় এই অঙ্গীকারের অভ্যন্তরীণ আর আন্তর্জাতিক প্রভাব নিয়ে অবগত ছিল না কোন দেশ।
সংবাদ মাধ্যম সিএনএন'এর বিশ্লেষণ বলছে, দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রমাণ করেছে, এক বছরে ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন, একইসঙ্গে মিত্র দেশগুলোর সঙ্গেও বৈরিতা তৈরি হয়েছে মার্কিন মুলুকের। যে কারণে রাজনৈতিকভাবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন মার্কিন নাগরিকরা। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে নির্বাচন সামনে রেখে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসের সমর্থনেও।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন রাজনীতিতে মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত এতোটা প্রভাব কখনও ফেলেনি।
জর্জ ওয়াশিংটনের অধ্যাপক ড. মেলানি ম্যাকলিস্টার বলেন, 'ইউনিভার্সিটিপ্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে জটিলভাবে ইসরাইল- ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প কিংবা কামালা, কারো অবস্থানই ইসরাইলের জন্য খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি।'
সংবাদ মাধ্যম সিএনএন'এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলা শুধু মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত অবস্থানে পরিবর্তন আনেনি। এরপর গাজায় ইসরাইলের সেনা অভিযানের পাশাপাশি হুতি, হিজবু্ল্লাহ'র সঙ্গে সংঘাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ইরান - যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো শত্রুতা।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারে হামলার মতো এবার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস আর ইসরাইলের সংঘাতে যেমন শত শত মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, তেমনি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়েছে হাজার মাইল দূরে।
যুক্তরাষ্ট্র আর মিত্র দেশগুলো এরমধ্যেই ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোন হামলা থেকে ইসরাইলকে বাঁচাতে অপারেশন চালিয়েছে। হুতিদের ওপরও বোমা হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হামাস-ইসরাইল সংঘাত মিশেছে নির্বাচনী বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বিষাক্ত রাজনীতির সঙ্গে। জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে জো বাইডেনের।
বিশ্লেষণ বলছে, ট্রাম্প আর কামালার নতুন নির্বাচনী দৌড়ের ফলাফলেও প্রভাব ফেলবে এই মধ্যপ্রাচ্য সংকট, কারণ অনেক ইহুদি এটাও ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তারা নিরাপদ কিনা।
সংবাদ মাধ্যম সিএনএন'এর বিশ্লেষণ বলছে, রাশিয়া আর চীনের তরফ থেকে এতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার পর বাইডেন প্রশাসনের জন্য ইসরাইল-ফিলিস্তিনি দ্বিরাষ্ট্র সমাধানই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যা প্রভাব ফেলছে দেশটির পররাষ্ট্র নীতিতে। ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে ইরানের সঙ্গে সরাসরি কোন সংঘাতে জড়ায়নি যুক্তরাষ্ট্র, তবে এখন সেই শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ইসরাইলের কট্টর সমর্থকদের একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এরপরও ইসরাইলের ইতিহাসের সবচেয়ে ডানপন্থি সরকারের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে গাজায় সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে মার্কিন প্রশাসনের আহ্বানের কোন তোয়াক্কা করেনি ইসরাইল। যে কারণে আন্তর্জাতিকভাবে অবস্থান হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হুমকিতে পড়ে গেছে পররাষ্ট্রনীতি।
মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলছে হামাস - ইসরাইল সংঘাত। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কাজ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এবারের সংঘাত মার্কিন রাজনীতিতে বেশ প্রভাব ফেলেছে। ইসরাইলকে কোনোভাবে দমাতে না পারায় হাজার হাজার আরব আমেরিকান ভোটার আর বাইডেনকে সমর্থন দিচ্ছেন না। ফলশ্রুতিতে সমর্থন কমে যেতে পারে কামালা হ্যারিসেরও।
ইহুদি বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ায় বিপাকে পড়ে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ইহুদি নাগরিকরা। হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব কে নিচ্ছেন, মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু নিয়ে এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন ডেমোক্রেট আর রিপাবলিকানরা। কামালা হ্যারিস জিতলে তাকে নতুন করে যুদ্ধ বিষয়ক নীতি গ্রহণ করতে হবে। আগামী কয়েক মাসে তাই যুদ্ধ বন্ধের কোন সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে ট্রাম্প জিতলে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে প্রভাব না পড়ে, এমন পদক্ষেপ নেবেন তিনি। যে কারণে মধ্যপ্রাচ্য সংকট এবার সরাসরি প্রভাব ফেলবে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে।