দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব নিয়েই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে গণহারে আরোপ করা হবে শুল্ক। এবার ঘোষণার মধ্য দিয়ে অবশেষে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক খড়গ নামলো বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনাম, লাওস, পাকিস্তান, ইসরাইলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। অন্তত ১৮৫ টি দেশে আরোপ করা হয়েছে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘এখন থেকে অন্য দেশে পারস্পারিক শুল্কারোপ করছে যুক্তরাষ্ট্র। অনেক দেশ আমাদের সঠিক মূল্যায়ন করেনি। তারা আমাদের পণ্যে শুল্ক বসিয়ে রেখেছে। অনেক উপায়ে আমাদের ঠকিয়েছে। আমরা বরাবর দয়া করেছি। যে কারণে আমাদের এতো বাণিজ্য ঘাটতি। কিন্তু আর না।’
বুধবার হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকের পর দেশে দেশে শুল্কারোপ ও রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পারস্পারিক শুল্কারোপের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন তিনি। দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি স্মরণকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোয় দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই এই শুল্কারোপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দাবি, অর্থনৈতিক মুক্তির দিনে এই শুল্কারোপই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্বর্ণযুগের দ্বার খুলে দেবে। ১০ শতাংশের ওপরে শুল্কারোপ কার্যকর হবে ৯ এপ্রিল থেকে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা ট্রাম্পের
বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে। দেশের তৈরি পোশাক খাতের বড় ক্রেতা দেশ যুক্তরাষ্ট্র। বছরে প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে বাংলাদেশ, যার বড় অংশ তৈরি পোশাক খাত। এছাড়াও, ভিয়েতনামে শুল্কারোপ করা হয়েছে ৪৬ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ৪৯ আর লাওসে ৪৮ শতাংশ পারস্পারিক শুল্কারোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
নির্বাহী আদেশে, চীনের ওপর সবচেয়ে বেশি শুল্ক চাপ পড়ছে। আগের ২০ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে মিলিয়ে চীনা পণ্যে এখন শুল্কের পরিমাণ ৫৪ শতাংশ। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, পারস্পারিক শুল্কারোপে যথেষ্ট ছাড় দিয়েছেন তিনি। বাদ যায়নি বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারত কিংবা ইসরাইলও। ভারতে ২৬ আর ইসরাইলের ওপর আরোপ করা হয়েছে ১৭ শতাংশ শুল্ক। তবে তালিকায় নেই রাশিয়ার নাম।
আরো পড়ুন: 'যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক পুনর্বিবেচনায় কাজ করছে এনবিআর'
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘শুরুতেই চীন আছে। চীন ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপ করেছে মার্কিন পণ্যে। আমরা বড় ধরনের কোন ধাক্কা দিতে চাইনি। আমাদের তালিকা বেশ ছোট। আমরা পারস্পারিক ৩৪ শতাংশ শুল্কারোপ করছি। সহজ কথায়, তোমরা চার্জ করলেও আমরাও করবো। এখানে দুঃখ পাওয়ার কি আছে। এটাকে পুরোপুরি পারস্পারিক বলাও যায় না।’
আরো পড়ুন: 'যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চমাত্রার শুল্কারোপে তৈরি পোশাকখাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে'
কানাডা আর মেক্সিকোর ওপর আরোপ করা হয় ২৫ শতাংশ শুল্ক। এর ঠিক আগেই অন্য দেশে মার্কিন গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর গাড়ি যুক্তরাষ্ট্রে বাজারজাতকরণের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেন ট্রাম্প। অপ্রত্যাশিত এই শুল্কারোপের দুটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের পর বিশ্বব্যাপী হইচই পড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র আর এশিয়ার শেয়ারবাজারে সূচকের ব্যাপক দরপতন হয়।