উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

ক্ষমতায় ফিরলে অবৈধ অভিবাসীদের দেশ ছাড়া করবেন ট্রাম্প!

প্রেসিডেন্ট হয়ে ক্ষমতায় ফিরলে গণহারে অবৈধ অভিবাসীদের দেশ ছাড়া করবেন, এমনটাই বলে রেখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই অভিবাসীদের সংখ্যা অন্তত ১০ লাখ বলে দাবি করছেন রিপাবলিকান প্রচারণা শিবির। কিন্তু প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর এ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই, আছে পাহাড়সম আইনি প্রতিবন্ধকতাও, বলছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।

ভোটে জিতলে গণহারে অবৈধ অভিবাসীদের দেশছাড়া করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, নির্বাচনি প্রচারে বারবার করছেন এমন দাবি। আইনি অনুমতি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে কত মানুষের বাস, প্রকৃত সে সংখ্যা অজানা হলেও কত মানুষকে ফেরত পাঠাবেন নিজ নিজ দেশে, একেক প্রচারণায় তার একেক অঙ্ক প্রকাশ করেছেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। তবে সংখ্যাটা অন্তত ১০ লাখ বলে দাবি ট্রাম্পের রানিং মেট ও রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জেডি ভ্যান্সের।

রিপাবলিকান প্রচারণা শিবিরের দাবি, প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কামালা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার চার বছরে সীমান্ত পথে অন্তত ১০ লাখ মানুষের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে ডেমোক্র্যাট সরকার। নির্বাচনে জিতলে শুরুতে এই অভিবাসীদেরই ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেবেন ট্রাম্প। কিন্তু যতটা সহজে এ দাবি করছেন ট্রাম্প, বিষয়টা ততোটাও সহজ নয় বলে জানিয়েছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। নির্বাচন সামনে রেখে রিপাবলিকান নেতার 'ম্যাস ডিপোর্টেশন নাও!' স্লোগান বাস্তবায়নের পথে আইনি ও বাস্তবতা- দু'দিক থেকেই আছে বড় বাধা।

অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবীরা বলছেন, এত বিপুলসংখ্যক অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হলে জনসম্পদের দিক থেকে মার্কিন প্রশাসনকে চড়া মাশুল তো গুণতে হবেই, পাশাপাশি দেশজুড়ে বিভিন্ন এলাকা আর কর্মক্ষেত্রে বড় পরিসরে অভিযান চালাতে হবে, যা একইসঙ্গে সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়সাপেক্ষ। এছাড়া বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে অসংখ্য পরিবার, যার ফলে উল্টো অভিবাসী ও মানবাধিকার কর্মীদের আইনি বাধার মোকাবিলা করতে হবে ট্রাম্পকে।

অবৈধ অভিবাসীদের গণপ্রত্যাবাসনে প্রতিবন্ধকতাগুলো কী? মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অনুমতিপত্র ছাড়া বসবাসরত অভিবাসীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় এক কোটি ১০ লাখ। ২০০৫ সাল থেকে তুলনামূলক স্থির আছে এ সংখ্যা। ফলে এদের বেশিরভাগই, পাঁচ ভাগের প্রায় চার ভাগ, অর্থাৎ ৮০ শতাংশ মানুষ মার্কিন ভূখণ্ডে বাস করছেন দীর্ঘদিন ধরে, সময়টা অন্তত এক দশকের বেশি। দেশে ফেরত যেতে হলেও আগে নিয়ম মেনে স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন এবং আদালতে শুনানির অধিকার তাদের আছে। হঠাৎ এ সংখ্যা নাটকীয় মাত্রায় বেড়ে গেলে অভিবাসী আদালত ব্যবস্থা সে চাপ নেয়ার জন্য প্রস্তুত কিনা, তা নিয়ে আছে প্রশ্ন।

অবৈধ অভিবাসীদের বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন কেন্দ্রীয় অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইসের মাধ্যমে নয়, বরং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় অনেক শহর ও জেলায় আইসকে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা নিষিদ্ধ করে আইন রয়েছে। ট্রাম্পের প্রচার শিবির এই শহর ও অঞ্চলগুলোকে 'আশ্রিতদের স্বর্গ' উল্লেখ করে এসব শহর ও অঞ্চলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয়, প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় আইনের মধ্যকার জটিলতায় তা প্রায় অসম্ভব।

কোনোক্রমে অবৈধ অভিবাসীদের গণপ্রত্যাবাসনের সকল আইনি বাধা পার করতে পারলেও এরপর সাংগঠনিক বাধার মুখে পড়তে হবে মার্কিন প্রশাসনকে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসনামলে সীমান্তে সাম্প্রতিক আটককৃতদের ঘিরে পরিচালিত হচ্ছে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম। সীমান্ত থেকে অনেকটা ভেতরে বসবাসরত অভিবাসী জড়িয়ে গেছে বিভিন্ন অপরাধী চক্রে। সাবেক ট্রাম্প শাসনামলে এ ধরনের কর্মক্ষেত্রে অভিযান চললেও ব্যাপক বিতর্কের জেরে সে কর্মসূচি স্থগিত হয়ে যায় ২০২১ সালে।

এছাড়া বিশ্লেষকরা বলছেন আইসের ২০ হাজার কর্মী নিয়ে ট্রাম্পের দাবিকৃত অনুপ্রবেশকারীদের এক ভাগ মানুষকেও দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এ কাজে ট্রাম্প ন্যাশনাল গার্ডসহ বিভিন্ন শাখাকে যুক্ত করবেন বললেও ঐতিহাসিকভাবে অভিবাসীদের বিষয়ে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর যুক্ত হওয়ার ঘটনা বিরল।

গণপ্রত্যবাসনের মতো কর্মযজ্ঞ কীভাবে পরিচালনা করা হবে, সে বিষয়েও ট্রাম্পের পরিকল্পনা স্পষ্ট নয়। বিভিন্ন সময়ে দেয়া সাক্ষাৎকারে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য নতুন আটককেন্দ্র নির্মাণ, পুলিশকে জবাবদিহিতামুক্ত করা, স্থানীয় ও প্রাদেশিক পুলিশ বিভাগের জন্য প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সম্ভাব্য পদক্ষেপের কথা বলেছেন রিপাবলিকান নেতা।

বিশেষজ্ঞদের হিসেবে, ১০ লাখ বা এর বেশি অভিবাসীকে ফেরত পাঠাতে খরচ শুরুই হবে কয়েক লাখ-কোটি ডলার থেকে। ২০২৩ সালে দেড় লাখের কম অবৈধ অভিবাসীর শুধু পরিবহন ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আইসের খরচ পড়েছিল ৪২ কোটি ডলার। লাখ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে আদালতের শুনানি ও প্রত্যাবাসন পর্যন্ত আটকে রাখা ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হলে খরচ হবে পাহাড়সম। অস্বাভাবিক সংখ্যায় বাড়াতে হবে ফ্লাইট, যেখানে বর্তমান ধারণক্ষমতা নিশ্চিতেই দরকার পড়ছে সামরিক বিমানের।

২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের সাবেক শাসনামলে চার বছরে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছিল প্রায় ১৫ লাখ মানুষকে। বর্তমান বাইডেন প্রশাসনও তিন বছরে প্রায় ১১ লাখ মানুষকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। বাইডেন যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন, অর্থাৎ সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দুই মেয়াদ, তথা আট বছরে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছিলেন ৩০ লাখের বেশি অবৈধ অভিবাসী। ট্রাম্পের পরিকল্পনার সঙ্গে তুলনীয় একটি গণপ্রত্যাবাসন কর্মসূচিই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে, যখন ১৯৫৪ সালে এক বছরেই প্রায় ১৩ লাখ মেক্সিকান অভিবাসীকে ছাড়তে হয়েছিল মার্কিন ভূখণ্ড।

এসএস