মানাল সেলেম যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার এক বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা। ইসরাইলি আগ্রাসনে ভিটেমাটি হারিয়ে সাত সন্তান নিয়ে ঠাঁই মিলেছে খান ইউনিসের একটি তাঁবুতে। কিন্তু পর্যাপ্ত খাবার ও পানির ব্যবস্থা না থাকায় কোনোরকম দিন পাড়ি দিচ্ছেন ৫২ বছর বয়সী এই নারী।
মানাল সেলেম বলেন, ‘কেউ আমাদের কথা শুনুক। আমাদের জন্য তাঁবুর ব্যবস্থা করুক। এভাবে বাঁচতে পারছি না।’
শুধু মানাল সেলেমই নয়, খান ইউনিসসহ গাজার বিভিন্ন অংশের বাস্তুচ্যুত মানুষের গল্প ঠিক এমনই।
গাজার একজন বলেন, ‘দুই বছর ধরে আশ্রয়ের খোঁজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছি। এখন যেখানে ঠাঁই পেয়েছি তার অবস্থাও করুণ। তাঁবুর বেশিরভাগ অংশ ছিঁড়ে গেছে। এগুলো কেবল সূর্যের তাপ থেকে বাঁচাচ্ছে।’
অন্য একজন বলেন, ‘এটা কোনো সমাধান নয়। কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ আমাদের আশ্রয়ের জন্য ভালো সমাধান খুঁজে বের করতে।’
অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, এসব বাস্তুচ্যুত মানুষের জীবনে আসেনি তেমন কোনো পরিবর্তন। এতদিন ইসরাইলি আগ্রাসনের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটালেও, তাদের নতুন শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আসন্ন শীত। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উপত্যকাটিতে কাজ করা বিভিন্ন মানবিক সংস্থা।
আরও পড়ুন:
বাস্তুচ্যুতদের নিয়ে কাজ করা নওরেজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল জানায়, গাজায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষের জরুরি ভিত্তিতে আশ্রয়কেন্দ্রের প্রয়োজন। কিন্তু ইসরাইলি অনুমোদনের অপেক্ষায় প্রচুর পরিমাণ তাঁবু ও অন্যান্য সহায়তা সামগ্রী ঢুকতে পারছে না উপত্যকাটিতে। রয়টার্স জানায়, গাজায় টানা দুই বছরের ইসরাইলি আগ্রাসনে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন প্রায় ২৩ লাখ বাসিন্দা।
এছাড়া যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশে পূর্ণ প্রবেশাধিকার পাচ্ছে না মানবাধিকার সংগঠনগুলো। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম জানায়, যুদ্ধবিরতির পর থেকে সংস্থাটি গাজায় ২০ হাজার মেট্রিক টন খাবার সরবরাহ করেছে। যা মোট চাহিদার তুলনায় অর্ধেক। উপত্যকাটিতে সংস্থাটির ১৪৫টি বিতরণ কেন্দ্রের মধ্যে কার্যক্রম চলছে ৪৪টির।
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের মুখপাত্র আবির ইতিফা বলেন, ‘শীতকাল আসছে। এখনও অনেকে না খেয়ে আছে। মানুষের চাহিদা বাড়ছে। আমরা উত্তর সীমান্তের ক্রসিং পয়েন্টগুলোর প্রবেশাধিকার চাচ্ছি। এর মাধ্যমে আমরা গাজার উত্তর অংশে যেতে পারব। সেখানে খাদ্যের সংকট তীব্র।’
বর্তমানে গাজার দুটি অংশ দিয়ে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছে ডব্লিউএফপিসহ অন্যান্য মানবিক সংস্থা। প্রতিশ্রুতি থাকলেও এখনও ত্রাণ সরবরাহের জন্য রাফাহ ক্রসিং খোলেনি ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ।
তবে সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ইসরাইলের দাবি, যুদ্ধবিরতির শর্ত মোতাবেক গাজায় প্রতিদিন ৬০০ টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে তারা। তাদের অভিযোগ, হামাস সদস্যরা বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছানোর আগেই খাবার চুরি করছে। তবে এটি অস্বীকার করে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি বলছে , ইসরাইলি বাঁধার মুখে দিনে মাত্র ১৪৫টি ট্রাক প্রবেশ করতে পারছে উপত্যকাটিতে।





