ইসরাইলি বর্বরতা অব্যাহত; তিন মাসে অনাহারে ৩২৬ ফিলিস্তিনির মৃত্যু

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা | ছবি: সংগৃহীত
0

আন্তর্জাতিক চাপ ও সমালোচনার মুখেও গাজায় নজিরবিহীন হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে মঙ্গলবার (২০ মে) রাতভর হামলায় নতুন করে নিহত হয়েছেন অন্তত ৪২ জন। এছাড়াও উপত্যকাটিতে গেল প্রায় তিন মাসে অনাহারে মারা গেছেন ৩২৬ ফিলিস্তিনি। এর মধ্যেই গাজার অবশিষ্টাংশ দখলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরাইলি সেনাপ্রধান। তেল আবিবের এমন পদক্ষেপের প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এদিকে জাতিসংঘের দাবি, অবরোধ তুলে নিলেও গাজায় এখনও ত্রাণ বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।

কারো কথাই যেন কানে তুলছে না ইসরাইল। আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা। খান ইউনিসসহ গাজার প্রায় প্রতিটি অংশেই লাগামহীন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। ধ্বংসস্তূপ ও রাস্তার পাশে পড়ে আছে ফিলিস্তিনিদের মরদেহ। বিভিন্ন দেশের চাপ ও সমালোচনাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন গাজা এখন চূড়ান্ত দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। গাজা কর্তৃপক্ষের দাবি, গেল ২ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত অনাহারে গাজা উপত্যকাটিতে তিন শতাধিক ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। আর জাতিসংঘ বলছে, আগামী দুইদিনে মৃত্যু হতে পারে আরও ১৪ হাজার শিশুর। এমন পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তার ট্রাকের অপেক্ষায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু।

জাতিসংঘ বার বার সতর্ক করছে, গাজায় প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রয়োজন। যেখানে অনুমতি দেয়া হয়েছে মাত্র ১০০টি ট্রাকে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। মানবিক সহায়তা প্রবেশের অবরোধ তুলে নিলেও এখনও সীমান্তে অপেক্ষা করছে শত শত ট্রাক। জাতিসংঘের অভিযোগ, ত্রাণ সবরাহে এখনও বাধা দিচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, ‘শালোম ক্রসিংয়ে ফিলিস্তিনিদের জন্য আটা, ওষুধ, পুষ্টি সরবরাহ এবং অন্যান্য মৌলিক জিনিসপত্র পাঠানোর চেষ্টা করছি। তবে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ সেসব জিনিস ট্রাক থেকে নামিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে। পরে গাজা উপত্যকার ভেতরে প্রবেশের পর সেগুলো আবার লোড করতে হচ্ছে। এতে ত্রাণ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।’

এমন অবস্থায় গাজার আরও বেশকিছু অঞ্চল দখলে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর প্রধান। তার মতে, হামাস নির্মূলে তাদের সামরিক অভিযান আরও সম্প্রসারণ করা হবে।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আইয়াল জামির বলেন, ‘ইসরাইল একটি কাঠামোগত পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করছে। ধাপে ধাপে তা সম্পন্ন হবে। হামাসকে তার মূল্য দিতে হবে। এবার তারা ইসরাইলের অপ্রতিরোধ্য যুদ্ধের মুখোমুখি হবে। সামরিক অভিযান ও কৌশল সম্প্রসারণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ইসরাইল। গাজার অবশিষ্ট অঞ্চলও শিগগিরই দখলে নেয়া হবে।’

ইসরাইলের এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন গাজায় সামরিক অভিযানে তিনি আতঙ্কিত। নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলিদের বোমা হামলা মেনে নেয়ার মতো না। ফ্রান্স ও কানাডার নেতারাও একই অভিব্যক্তি জানিয়েছেন।

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের লিবিয়ায় নির্বাসনে পাঠানোর বিষয়ে কোনো আলোচনা করেনি যুক্তরাষ্ট্র। তবে গাজাবাসী স্বেচ্ছায় কোথাও যেতে চাইলে সর্বাত্মক সহায়তা করতে ট্রাম্প প্রশাসন প্রস্তুত বলে জানান তিনি।

মার্কো রুবিও বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের নির্বাসনের বিষয়ে কোনো আলোচনা এখনো হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছে। কেউ যদি স্বেচ্ছায় কোথাও যেতে চায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করবে। সেখানে লিবিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিনা তা জানা নেই।’

গেল ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের সমঝোতা ভেঙে দিয়ে হামলা জোরদার করে ইসরাইল। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে প্রাণ হারান তিন হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া যুদ্ধে ফিলিস্তিনে প্রাণহানি সাড়ে ৫৩ হাজার ছাড়িয়েছে।

এসএস