বুকের ধন একমাত্র শিশুপুত্রকে হারিয়ে বিলাপ করছেন মা ফেরিয়াল তাবাসি। শত চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি তাকে। ইসরাইলের ছোঁড়া রকেটে দেহ থেকে মাথা আলাদা হয়ে গেছে মধ্যবয়সী এই নারীর সন্তানের দেহ।
ফেরিয়াল তাবাসি বলেন, ‘আমার ছেলে ঘুমাচ্ছিলো। তার ওপর রকেট ছুড়েছে ইসরাইলি সেনারা। আমার ছেলে মারা যাওয়ার সময় বলছিলো, মা-সবসময় নেতানিয়াহু ছোট ছোট রকেট ফেলে, আমার ওপর কেন এতো বড় রকেট ফেলেছে। ছেলেটার দেহ থেকে মাথা আলাদা হয়ে গেছে। আমার ছেলে নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে বেহেশতে রয়েছে।’
তাবাসির মতো গাজার পথে ঘাটে হাসপাতালে একই দৃশ্য। স্বজনের মরদেহের ভার আর বইতে পারছেন না ফিলিস্তিনিরা।
গাজায় বসবাসকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘পৃথিবী বলতে কিছু নেই। প্রত্যেকে চেয়ে চেয়ে দেখছে, গাজায় কীভাবে নিষ্পাপ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে ইসরাইল। ক্ষুধার্ত অবস্থায় তাদের পাখির মতো মেরে ফেলছে।’
গেল বৃহস্পতিবার (১৫ মে) থেকে অপারেশন ‘গিডিয়নস চ্যারিয়ট’ নামে গাজায় ভয়াবহ অভিযান শুরু করেছে আইডিএফ। এই অপারেশনে প্রায় প্রতিদিনিই একশ’ থেকে দেড়শ’ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে ইসরাইল। ধ্বংস করছে তাদের মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়স্থলটুকুও। বুক থেকে কেঁড়ে নিচ্ছে প্রিয় সন্তান ও আপনজনদের। ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই স্মৃতি হাতরে বেড়াচ্ছেন মায়েরা।
গাজায় বসবাসকারী একজন মা বলেন, ‘চোখের সামনে সন্তানরা মারা গেছে। আমার ভাগিনা চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে। বাচ্চাদের কী দোষ ছিল? কেন তাদেরকে হত্যা করছে? ইসরাইলের কী ক্ষতি করেছে ছোট্ট এই শিশুরা।’
অন্য একজন বলেন, ‘কোন দিক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়েছে বুঝতেও পারিনি। আমার সন্তানকে নিয়ে তাবুতে বসে ছিলাম। আমাদের পাশের তাবুত এসে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়ে। আমার ছেলে ও স্বামী গুরুতর আহত হয়েছে।’
গেল কিছুদিন ধরেই হামাস নির্মূলের নামে ফিলিস্তিনিদের ওপর জাতিগত নিধন চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনারা। সামনের দিনগুলোতে তাদের এ হামলা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আইডিএফ মুখপাত্র।
আইডিএফের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেন, ‘ক্যাবিনেটের নির্দেশ অনুযায়ী গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ‘গিডিয়নস চ্যারিয়ট’ নামে অপারেশন চালানো হচ্ছে। বন্দিদের মুক্তি ও হামাসকে নির্মূল করতেই এই অভিযান চালানো হচ্ছে। গিডিয়নস চ্যারিয়ট অভিযানের মধ্য দিয়ে এক ধাপ এগিয়ে গেছে যুদ্ধ।’
ইতোমধ্যেই উপত্যকাটির দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরের আল-নাসের হাসপাতালে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। লন্ডভন্ড করে দিয়েছে ফিলিস্তিনিদের শেষ আশ্রয়স্থলটুকুও। ইসরাইলি এ হামলায় লাফিয়ে বাড়ছে নিহতের সংখ্যা।
এদিকে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির বিনিময় ইসরাইলের ৯ বন্দিকে মুক্তির বিষয়টি অস্বীকার করেছে হামাস। টেলিভিশন দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি অস্বীকার করেন গোষ্ঠীটির এক জ্যেষ্ঠ নেতা। আন্তর্জাতিক আইন মেনে গাজায় পুরোপুরি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করলে ইসরাইলের সব বন্দিকে মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।
এদিকে আন্তর্জাতিক মহলের চাপে দীর্ঘ ১০ সপ্তাহ ব্লকেডের পর এবার গাজায় ন্যূনতম কিছু খাবার প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরাল। তবে ঠিক কবে থেকে তা কার্যকর হবে এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি তেল আবিব। ইসরাইলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আপাতত আগের মতোই গাজায় থাকা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে এ খাবার বিতরণ করা হবে।
এর আগে উপত্যকার পাশে মিশরের রাফা সীমান্তের কাছে ইতালির বেশ কয়েকজন পার্লামেন্ট সদস্যসহ শিক্ষক, সাংবাদিক, এনজিও কর্মী বিক্ষোভ করে। জরুরি সহায়তা নিয়ে তা গাজায় পাঠানোর চেষ্টা করে তারা।