মধ্যপ্রাচ্য সফরের প্রথম দিনেই সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে ৬০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব। আশা করা হচ্ছে, চলতি সফরে আরও এক ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ নিয়ে আসতে সক্ষম হবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে, মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি আমেরিকা ফার্স্ট নীতি বাস্তবায়নের উদ্দেশে দ্বিতীয় মেয়াদেও প্রথম বিদেশ সফরে আরব উপসাগরীয় দেশ বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও সাদামাটা এই বিশ্লেষণের সঙ্গে একমত নন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ হাসিল করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অতীতেও এমন অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন যাকে এক ঢিলে দুই পাখি মারার সঙ্গে তুলনা করা যায়। তারা মনে করেন, আরব দেশগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব, নয়া বিনিয়োগের ঘোষণা ইত্যাদি সবই আসলে ইরানকে চাপে রাখার কৌশল। বিশ্লেষকদের দাবি, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সফরে ওয়াশিংটন ও গালফ রাষ্ট্রের মধ্যে যে ধহরম মহরম দেখা যাচ্ছে, তা কখনোই স্বাভাবিকভাবে নেবে না তেহরান।
মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এটি একধরনের পরীক্ষামূলক কূটনৈতিক আচরণ। দেখে মনে হচ্ছে ট্রাম্প গালফ নেতাদের মন গলানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু তিনি ভালো করেই জানেন, এতে করে ইরানের নেতারা ভীষণ অসন্তুষ্ট হবে।’
বিশ্লেষকদের এই আশঙ্কার কিছুটা আভাস দিয়েছে খোদ ইরানই। মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য সফরের ঠিক আগের দিন ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স নিশ্চিত করেছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে তেহরান। মস্কোর গণমাধ্যমও বলছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ হলে ইরানে পাড়ি দেবেন পুতিন। বিশ্লেষকদের দাবি, রাশিয়া-ইরান সম্পর্কের গতিবিধি নিয়ে ওয়াশিংটনের যে তীব্র মাথাব্যথা আছে নিয়ে কোনো সংশয় নেই।
এদিকে সিরিয়ার ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণাও ভাবাচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের। ওয়াশিংটনের দূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাধ্যমে সিরিয়ায় রাজনৈতিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে মাত্র। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এত দ্রুত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়াটা ট্রাম্পের হটকারী সিদ্ধান্ত।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক রোজমেরি কেলানিক বলেন, ‘ট্রাম্পের আরও সতর্ক থাকা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের আরও সাবধানে পা ফেলা উচিত। কারণ আপনি পুরোদস্তুর খেটে এমন কোনো রাষ্ট্রে বিনিয়োগ করতে চান না, যারা মাত্র ছয় মাস ধরে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। এমন কোনো গ্যারান্টি নেই যে তারা ছয় মাসের বেশি টিকে থাকবে, তাই না।’
মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষে ইরানকে কতটা কোণঠাসা করতে পারবেন ট্রাম্প, কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার ভারসাম্যে নতুন করে কোনো পরিবর্তন আসবে কী না- এখন সেদিকের নজর থাকবে বিশ্বের।





