পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানের বক্তব্যে বিশ্বাস নেই যুক্তরাষ্ট্রের

ইরানের একটি পারমাণবিক কেন্দ্র
ইরানের একটি পারমাণবিক কেন্দ্র | ছবি: সংগৃহীত
0

ইরান বলছে বেসামরিক উদ্দেশে পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনার করছে তারা। তবে তাদের এমন বক্তব্যে বিশ্বাস নেই যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার। পারমাণবিক বোমা তৈরির অভিযোগ এনে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ। এবার আলোচনায় সমাধান না আসলে ইরানে হামলাও চালাতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন।

দফায় দফায় আলোচনা করেও পরমাণু ইস্যুতে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র। ওমানের মধ্যস্থতায় একটি গ্রহণযোগ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে পরোক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে দুই পক্ষ। নতুন করে চুক্তিতে না আসলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে হামলা চালানোর হুমকিও দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ইরান শুরু থেকেই বলে আসছে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি কেবল বেসামরিক উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হচ্ছে। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো চেষ্টাই করছে না তারা। তবে তেহরানের এমন বক্তব্যে বিশ্বাস নেই আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর। ২০০২ সালে ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে। তখন থেকেই সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।

পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রয়োজন। যেখানে ইরানকে মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ ইউরেনিয়াম মজুতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে গেল মাসে আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থা জানায়, ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে। যা দিয়ে কমপক্ষে ৬টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি সম্ভব। এগুলো তৈরিতে খুব সময়েরও প্রয়োজন হবে না তেহরানের।

মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা চাথাম হাউস কর্মসূচির পরিচালক ড. সানাম ভাকিল, ‘ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য বলছে, ইরান এখন তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পদক্ষেপে দ্রুত অগ্রসর ও বিপজ্জনকভাবে এগিয়েছে ইরান।’

এর জেরে যুক্তরাষ্ট্রসহ জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১০ সাল থেকে ইরানের ওপর ব্যাপক হারে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়। এতে তেল বিক্রি বন্ধের পাশাপাশি তেহরানের ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বৈদেশিক সম্পদ জব্দ করা হয়। যা দেশটিকে অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ঠেলে দেয়। তবে ইরান বলছে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করবে না তারা।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, ‘পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ একটি বাস্তব, স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য বিষয়। সম্ভাব্য উদ্বেগের বিষয়ে আস্থা তৈরিতে ইরান প্রস্তুত। তবে সমৃদ্ধকরণের বিষয়ে কোনো ছাড় দেবে না তেহরান।’

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরানকে তার পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে হবে। এছাড়া, তাদের সব পারমাণবিক স্থাপনা পরিদর্শনে অনুমতি দিতে হবে আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থাকে। একই দাবিতে সোচ্চার ইসরাইলও। কারণ ইরানকে নিজেদের অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে দেখে ইসরাইল। তবে ইরানের সঙ্গে কার্যকর একটি চুক্তির বিষয়ে আশাবাদী ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘খুব সহজে বলতে গেলে, ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারবে না। ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম হোক যুক্তরাষ্ট্র তা চায় না। কারণ তাদের কাছে এই অস্ত্র থাকলে সবাই অশান্তিতে থাকবে। সবার জীবন বড় বিপদের মুখে পড়বে।’

ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোতে বোমা হামলা চালানোর সামরিক ক্ষমতা আছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের। তবে এ ধরনের অভিযান জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, মূল পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ভূগর্ভে নির্মিত। ইরানও নিজেদের রক্ষায় ছেড়ে কথা বলবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে আঞ্চলিক সংঘাত আরও বিস্তৃত হবে।

এএইচ