নিশ্চিহ্নের পথে গাজা, নিশ্চুপ মুসলিম বিশ্ব

মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

চোখের সামনে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে গাজা উপত্যকা। ভয়াবহ এমন পরিস্থিতি দেখেও টনক নড়ছে না মুসলিম বিশ্বের। এদিকে গাজাকে শেষ করার মিশনে নেমেছে ইসরাইল। এতে ইন্ধন জোগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নেতারা। উপত্যকার ৯০ শতাংশ মানুষ এরই মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। যারা বেঁচে আছে তারাও তীব্র খাদ্য সংকট ও বোমার আতঙ্কে দিন পার করছে। গাজার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।

এটি গাজার বছর খানেক আগের চিত্র। যেখানে বাসিন্দাদের অবাধ বিচরণ ছিল। খেলাধুলায় মেতে থাকতো শিশুরা। ছবির মতো সুন্দর এই উপত্যকা এখন মৃত্যুপুরী। প্রতিদিনই মৃত্যুর প্রহর গুনছে গাজাবাসী। ইসরাইলি বোমার হাত থেকে রেহাই পায়নি নারী থেকে শিশু কেউই।

মাত্র দেড় বছরে গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইসরাইলি বাহিনী। ঘরবাড়ি হারিয়েছে প্রায় ১৯ লাখ ফিলিস্তিনি। যা উপত্যকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ। মাত্র ৩ সপ্তাহের ব্যবধানে হত্যা করা হয় হাজারের ওপর ফিলিস্তিনিকে। এ নিয়ে গাজায় প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজারের ওপর।

প্রথম পর্যায়ের ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতিতে দুই পক্ষের মধ্যে বন্দিবিনিময় হয়। শত শত ফিলিস্তিনি ফিরে আসে নিজ আবাসভূমিতে। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির বদলে রোজার মধ্যে গেল ১৮ মার্চ থেকে হামলা জোরদার করে ইসরাইলিরা। মৃত্যুর মিছিল ও আহাজারিতে গাজার বাতাসে নিশ্বাস নেয়া এখন কঠিন। অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে গাজাবাসী।

এতকিছুর পরও অনেকটাই নিশ্চুপ মুসলিম বিশ্ব। ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিবেশি লেবানন, ইয়েমেন, ইরান প্রতিরোধ গড়ে তুললেও বেশিরভাগ আরব রাষ্ট্র একেবারেই নিষ্ক্রিয়। গাজায় ইসরাইলি বর্বরতা সবধরনের নৃশংসতাকে হার মানিয়েছে।

এদিকে ইসরাইলকে একরকম সবুজ সংকেত দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়েছে ইউরোপের বেশকিছু দেশ। এবার মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে দেয়ার মিশন শুরু করেছেন নেতানিয়াহু। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই গাজাকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার পরিকল্পনা তার।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, 'ইহুদি জনগণের বিশাল শক্তি আছে। এই শক্তি বিশ্বের বুকে ইসরাইলকে টিকিয়ে রাখবে। ইসরাইল তার আঞ্চলিক শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সৃষ্টিকর্তার সহায়তায় খুব শিগগিরই ইসরাইলের বিজয় আসবে। এই বিজয়ের জন্য সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনতে হবে।'

বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু হামাস নির্মূলই নেতানিয়াহুর একমাত্র লক্ষ্য না। এই উপত্যকায় ইসরাইলিরা দখলদারিত্ব চান। যা গাজার জন্য সবচেয়ে কঠিন বাস্তবতা। যারা বেঁচে আছেন তারাও এক টুকরো রুটির জন্য হাহাকার করছে। বোমার আঘাতে নয় খাদ্য সংকটেই প্রাণ হারাবেন বহু ফিলিস্তিনি, এমনটাও আশঙ্কা অনেকের। নেতানিয়াহুর ওয়াশিংটন সফর নতুন করে শঙ্কা জাগাচ্ছে গাজাবাসীর মনে।

স্থানীয় একজন বলেন, 'আরব ও মুসলিম বিশ্ব যতদিন ঘুমিয়ে থাকবে, ততদিন গাজায় গণহত্যা ও নৃশংসতা চলবে। সাহায্য চাওয়ার মতো গাজাবাসীর কেউ নেই।'

অন্য একজন বলেন, 'নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় গাজায় হত্যা, রক্তপাত ও ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ হবে না। তারা ফিলিস্তিনিদের রক্তের ওপর দিয়েই ক্ষমতায় এসেছে।'

গাজায় এমন একজনও ব্যক্তি নেই যার জীবনে যুদ্ধের প্রভাব পড়েনি। ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় গাজাবাসী। তারা জানে না এই যুদ্ধের শেষ কোথায়।

এসএস