ইসরাইল-ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময়, হামাসকে ধন্যবাদ জানালো ফিলিস্তিনিরা

.
মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময় চলছে। হামাসের হেফাজতে থাকা বন্দিরা সুরক্ষিত অবস্থায় মুক্তি পেলেও ইসরাইলের কাছে থাকা বন্দিরা ভোগ করেছেন অমানুষিক নির্যাতন। উপত্যকায় ফিরে হামাসকে ধন্যবাদ জানিয়ে তারা বলছেন, গাজাকে স্বাধীন করা হবে। এদিকে, যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন যাচ্ছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। এমন অবস্থায় বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীকে অন্য দেশে আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবে একযোগে ভেটো দিয়েছে আরব বিশ্ব।

শনিবার ইসরাইলি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে প্রায় দুইশ' ফিলিস্তিনি কারাবন্দি। স্বজনদের এক নজর দেখতে খান ইউনিসে অপেক্ষায় ছিলেন শত শত ফিলিস্তিনি। মুক্ত হয়ে প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে।

মুক্তি প্রাপ্ত একজন বলেন, ‘প্রতিরোধ অক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের যারা কারামুক্ত করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা স্বাধীন হবোই। আর কেউ কারাবন্দি থাকবে না। প্রতিরোধ অক্ষ ইসরাইলকে পরাজিত করেছে।’

আরেক মুক্তি প্রাপ্ত বলেন, ‘গাজা অবরুদ্ধ হলেও এই উপত্যকা আমাদের স্বাধীনতার স্বাদ দেয়। গাজা এখনও অবরুদ্ধ, কিন্তু আমরা বেশিদিন গাজাকে ইসরাইলের অধীনে থাকতে দেবো না। দ্রুত গাজাকে মুক্ত করবো।’

প্রতিবারই ফিলিস্তিনিরা কারাগার থেকে মুক্ত হলে মানবেতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় গাজায়, এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। যারা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন, তাদের অনেকের শরীরে স্পষ্ট ইসরাইলি কারাগারে নির্যাতনের চিহ্ন। অনেকেই শারীরিক দুর্বলতার কারণে বাস পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারছিলেন না।

প্রিজনার্স সোসাইটি জানায়, অনেক কারাবন্দিকে মারধর করা হয়েছে, খাবার দেয়া হয়নি, চিকিৎসা দেয়া হয়নি। মারধরের কারণে অনেকের পাঁজর ভেঙে গেছে। অন্যদিকে, কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া ফিলিস্তিনিরা বলেছেন, ১৫ মাস ধরে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে তাদের ওপর।

যদিও ইসরাইলি বন্দিদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। হামাসের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া তিন বন্দির মধ্যে কারও গায়ে ছিল না কোন আঘাতের চিহ্ন। এমনকি যারা মুক্তি পেয়েছেন, তারা হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছেন। তাদের শারীরিক পরীক্ষার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, মুক্ত হওয়া ইসরাইলিদের শারীরিক অবস্থা বেশ ভালো। হামাসের বিশেষ শাখা কাসেম ব্রিগেড জানায়, বন্দিদের শারীরিক আর মানসিক অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়, হামাসের নীতি অনুযায়ী, বন্দিরা কারাগারে কোন ধরনের নির্যাতনের শিকার হননি।

এখনও হামাসের কাছে বন্দি ৭৯ ইসরাইলির মুক্তির দাবিতে তেল আবিবে বিক্ষোভ করেছে ইসরাইলের সাধারণ মানুষ। যদিও বন্দিদের মুক্ত করার পর দেশে তাদের স্বাগত জানিয়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সব বন্দিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। চুক্তি ভঙ্গ করলে তা সহ্য করা হবে না। আসন্ন ওয়াশিংটন সফরে যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ নিয়ে আলোচনার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি, চুক্তি ভঙ্গ হয় এমন কোনোকিছু সহ্য করা হবে না। সব বন্দির নিরাপদে ফিরিয়ে আনবো। সঙ্গে যুদ্ধের লক্ষ্যও পূরণ করবো। সৃষ্টিকর্তার সাহায্যে সফল হবোই।’

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও অবরুদ্ধ পশ্চিমতীরে অব্যাহত রয়েছে ইসরাইলি দখলদারদের আগ্রাসন। প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ গ্রুপের সঙ্গে সংঘাত চলছে ইসরাইলি বাহিনীর। ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে পশ্চিমতীরের বাসিন্দাদের। শনিবার ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর হামলায় জেনিনে নতুন করে প্রাণ গেছে আরও অন্তত ৫ জনের।

এদিকে, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের মিশর আর জর্ডানে পাঠানোর বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৃতীয় দফার প্রস্তাবের কড়া জবাব দিয়েছে আরব দেশগুলো। কায়রোতে এক যৌথ বিবৃতি দেন আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। যেখানে বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের কোনো অবস্থাতেই নিজ ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত করা যাবে না। তারা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দ্বিরাষ্ট্র বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে ইসরাইলি সেনা প্রধান হার্জি হালেভি পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার পর নতুন সেনা প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ইয়াল জামিরকে। আগামী ৬ মার্চ সেনা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব শেষ হচ্ছে হারজি হালেভির।

এএম