একদিকে দক্ষিণ গাজায় প্রবেশ করছে একের পর ত্রাণ বোঝাই ট্রাক, অন্যদিকে তীব্র শীতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে অসহায় শিশুরা। উত্তর গাজায় বোমা হামলা করে বাসিন্দাদের সরে যেতে বাধ্য করছে ইসরাইল। অধিকৃত পশ্চিমতীরের জেনিন শহরে রীতিমতো আগ্রাসী অভিযান চালাচ্ছে নেতানিয়াহু বাহিনী। বাস্তবতা বলছে, ১৫ মাস যুদ্ধের পর অস্ত্র বিরতি সাময়িক স্বস্তির কারণ হলেও, দুর্ভোগ কমেনি গাজাবাসীর।
এক অধিবাসী জানান, ত্রাণ সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু যতটা আশা করেছিলাম সে তুলনায় ত্রাণ পাচ্ছি না।
তারা বলছে আরও এক সপ্তাহ পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। তবে ত্রাণ সরবরাহ সচল থাকায় কিছুটা স্বস্তিতে আছি।
অস্ত্র বিরতির চুক্তি অনুসারে, শুক্রবার দ্বিতীয় ধাপে দীর্ঘদিন জিম্মি থাকা ৪ ইসরাইলি নারী সেনাসদস্যের নাম প্রকাশ করেছে হামাস। লিরি অ্যালবাগ, ড্যানিলা গিলবোরা, কারিনা এরিয়েভ ও নামা লেভি গেল ৪৭৭ দিন ধরে হামাসের কাছে জিম্মি ছিলেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর নেহাল আর্মি বেইজ থেকে যে ৭ জন নারী সেনাকে জিম্মি করা হয় তাদের মধ্যে এই ৪ জনও ছিলেন।
২০ বছরের কম বয়সী এই চার নারীর মুক্তির খবরে স্বস্তি প্রকাশ করলেও পশ্চিমতীরে ইসরাইলি আগ্রাসন অস্ত্র বিরতিকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে অভিযোগ জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠন, ওএইচসিএইচআরের।
ওএইচসিএইচআরের মুখপাত্র তাহমিন আল-খিতান বলেন, ‘জিম্মি-বন্দি বিনিময়ের অগ্রগতি বাদ দিলে পশ্চিমতীরে যা চলছে তা যথেষ্ট উদ্বেগের। অস্ত্র বিরতির চুক্তিতে এর প্রভাব পড়বে। এমনকি চুক্তি অকার্যকর হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।’
গেল রোববার হামাস-ইসরাইল যখন অস্ত্র বিরতির চুক্তিতে সম্মত হয়, তখন এর পেছনে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনের লোকবল সংকট ও সক্ষমতার অভাবকে আলোচনায় আনেন পশ্চিমা বিশ্লেষকরা।
যদিও তাদের এই পর্যবেক্ষণের বিপরীতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বিশ্লেষণ বলছে, গাজায় আগ্রাসন শুরু পর নতুন করে হামাসে যোগ দেয়া সদস্যের সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ হাজার।
এই সদস্যরা বয়সে তরুণ হলেও হামাসের সাংগঠনিক তৎপরতা তেল-আবিবের জন্য মাথাব্যথার কারণ হতে পারে বলেও দাবি রয়টার্সের।
এদিকে, গাজায় অস্ত্র বিরতি চলমান থাকলেও ইরানের অক্ষশক্তির সাথে রেষারেষি বন্ধ করার কোনো লক্ষণ নেই ইসরাইলের।
২৭ নভেম্বরের চুক্তি অনুসারে আগামী রোববার লেবাননের দক্ষিণ সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা থাকলেও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, ৬০ দিনের মধ্যে লেবানন থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়ার শর্ত পুরোপুরি মানবে না তেলআবিব।
তার অভিযোগ লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ শুরু থেকেই যুদ্ধবিরতির চুক্তি ভঙ্গ করে আসছে।
লেবানন-ইসরাইল অস্ত্র বিরতি নিয়ে যখন ধোঁয়াশা চলছে তখন লেবানন সফরে এসে কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অঙ্গীকার করেছেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে বৈরুতের পাশে থাকবে আরব দেশীয় জোট 'গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিল'।
কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ আলি আল-ইয়াহিয়া বলেন, ‘এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিলের সদস্যরা পাশে থাকবে। এই সফরে আমাদের আলোচনার মূল বিষয় জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কীভাবে ভ্রাতৃত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব বাড়ানো যায়। বিশ্ববাসীকে বার্তা দিতে চাই, গালফ কাউন্সিল লেবাননের পাশে আছে।’
যদিও, লেবাননের যুদ্ধবিরতি অকার্যকর হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে ইসরাইলি গণমাধ্যম। হোয়াইট হাউজ সূত্রের তথ্য পর্যালোচনা করে টাইম অব ইসরাইল বলছে, ইসরাইল-লেবাননের এই ৬০ দিনের অস্ত্র বিরতির সময়সীমা সাময়িকভাবে আরও কিছুদিন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে, হিব্রু মিডিয়া রিপোর্টের প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, যুদ্ধবিরতি দীর্ঘায়িত করার এই প্রস্তাব এসেছে মূলত নেতানিয়াহুর কেবিনেট থেকে।