বিদায়বেলায় হয়তো একটা কাজে সফল হতে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গাজায় এক বছরের বেশি সময়ের আগ্রাসনের পর ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময় আর যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে আসতে সম্মত হয়েছে ইসরাইল। দোহায় যুক্তরাষ্ট্র আর কাতারের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষর হয় ১৫ মাসের আগ্রাসনের অবসানের চুক্তি। শনিবার ইসরাইলের কেবিনেটে ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে হবে প্রস্তাবের চূড়ান্ত অনুমোদন।
যদিও নেতানিয়াহুর অভিযোগ, শেষ মুহূর্তেও হামাস চুক্তি ভেস্তে দেয়ার চেষ্টা করেছিলো। যদিও চুক্তি হলেও এখনও তা কার্যকর নিয়ে রয়েছে নানামুখী ধোঁয়াশা। জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ডানপন্থী বেন গাভির বলেছেন, যুদ্ধের লক্ষ্য পূরণ হওয়ার আগে গাজা আর মিশর সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিলে মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে যাবেন তিনি।
হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলতে থাকলে তবেই সরকারের সঙ্গে থাকবেন তিনি। ডানপন্থী রাজনীতিবিদরা এই যুদ্ধবিরতির বিরুদ্ধে জেরুজালেমে করেছে বিক্ষোভও।
বেন গাভির বলেন, ‘বেপরোয়া এই চুক্তির যৌক্তিকতা নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগপত্র দেবো। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে তবেই মন্ত্রিসভায় আসবো। বন্দিদের জন্য আমাদের চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। এই চুক্তির কারণে হামাস আবার হামলা করবে, বন্দি করবে। প্রধানমন্ত্রীর কোন জ্ঞান নেই। তাই ভয়ংকর এই চুক্তি করে বসেছেন।’
এদিকে, বন্দি বিনিময় চুক্তিতে সন্তোষ জানিয়ে জি সেভেন বলছে, হামাস আর ইসরাইলকে পুরো চুক্তির বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে সহিংসতা, মুক্তি দিতে হবে বন্দিদের।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নেতানিয়াহুকে বন্ধু উল্লেখ করে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের নিরাপদে বসবাসের জায়গা নিশ্চিত করতে হবে নেতানিয়াহুকে।
জো বাইডেন বলেন, ‘আট মাসের একচেটিয়া আলোচনার পর আমার প্রশাসন হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তি করাতে পেরেছে। পরিকল্পনা আমার প্রশাসন তৈরি করেছে, বাস্তবায়নও তারাই করেছে। শত দিনের ব্যর্থতা আর একদিনের সার্থকতা এটাই। বন্দিদের সুস্থতা কামনা করি। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্যও শুভকামনা।’
যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর থাকবে ৪২ দিন, মুক্তি পাবে ৩৩ জন বন্দি। এরমধ্যে নেতজারিম করিডরসহ ঘনবসতিপূর্ণ উপত্যকার সীমান্তবর্তী সব এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিতে হবে ইসরাইলকে। সেনা থাকবে ৫ টি বিশেষ এলাকায়। দ্বিতীয় ধাপে আরও বন্দিদের মুক্ত করবে তেল আবিব। তৃতীয় ধাপে সব বন্দিদের মুক্ত করে পুরোপুরি ফিলিস্তিন থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেবে আইডিএফ।
তবে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের আগে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের বিষয়টি প্রশংসনীয়। যদি তারা এই ইস্যুতে সম্পৃক্ত না থাকতেন, এই চুক্তি চূড়ান্ত হতো না।
তিনি বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতিতে বাইডেনের কোনো অবদান নেই। যদিও মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চুক্তির পেছনে অবশ্যই ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাব রয়েছে। কিন্তু যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর রাজনৈতিক সমাধান সময়সাপেক্ষ আর অনিশ্চিত।
মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক ড. সানাম ভাকিল বলেন, ‘অবাক হবো যদি সোমবারের মধ্যে চুক্তি কার্যকর হয়ে যায়। হামাস আর নেতানিয়াহু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসায় আগে চুক্তি কার্যকর করতে চায়। ট্রাম্প এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, এটা পরিষ্কার। বন্দিদের মুক্ত না করলে মধ্যপ্রাচ্য নরকে পরিণত হবে। তবে জো বাইডেনকেও এই কৃতিত্ব দিতে হবে।’
এদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলছেন, এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি যেন ইসরাইল কোনোভাবে ভাঙতে না পারে, সেই দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এই চুক্তিতে স্বাগত জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যুদ্ধবিরতির পর গাজায় মানবিক সহায়তার জন্য প্রয়োজন হবে আরো তহবিলের।
কিন্তু এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরও থেমে নেই উপত্যকায় ইসরাইলি বর্বরতা। বৃহস্পতিবারের হামলায় গাজায় প্রাণ গেছে ৮০ জনের বেশি ফিলিস্তিনির। শনিবার নেসেটে অনুমোদিত হলে রোববার থেকে কার্যকর হবে বন্দি বিনিময় আর যুদ্ধবিরতি।