রাজকীয় এই সংবর্ধনাই বলে দেয়, অধীর আগ্রহে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বরণ করে নিতে মুখিয়ে ছিল মালয়েশিয়া। কুয়ালালামপুরের ন্যাশনাল প্যালেসে মালয়েশিয়ার রাজা সুলতান ইব্রাহিম ইস্কান্দার আর প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এভাবেই সংবর্ধনা দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্টকে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের মধ্যেই দেশের অর্থনীতি চাঙা করতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া সফর করছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ভিয়েতনামের পর অবস্থান করছেন মালয়েশিয়ায়। বার্তা দিচ্ছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বেশি নির্ভরযোগ্য বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ চীন। ২০১৩ সালের পর প্রথমবারের মতো মালয়েশিয়ায় সফরে এসে তিনি জানান, এই অঞ্চলের পাশাপাশি পুরো বিশ্বে শান্তি আর সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে বেইজিং।
এই সফর আর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে চায়না মিডিয়া গ্রুপকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, যৌথভাবে অর্থনীতি উন্নয়নে জোর দেয়া হবে। শি জিনপিং যৌথভাবে দ্বিপাক্ষিক উন্নয়নে জোর দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ২শ কোটি ডলার। ১৬ বছর ধরে চীনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ মালয়েশিয়া।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, 'শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এতো ভিন্নভাবে তিনি ভাবেন কীভাবে। কারণ তিনি সবসময় সংস্কৃতি, সভ্যতা আর সমৃদ্ধি ছড়িয়ে দেয়ায় বিশ্বাসী। এখনকার যুগে এমন মানুষ পাওয়া যায় না। অর্থনীতি উন্নত করতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দিতে হবে। কারণ মানব সভ্যতা ইতিহাসের বাইরে না।'
যুক্তরাষ্ট্র – চীনের শুল্কযুদ্ধে ক্ষতি এড়াতে দুই দেশই খুঁজছে বিকল্প বাজার। চীন বলছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতি প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ সম্প্রসারিত হলেও শুল্কযুদ্ধের কারণে চাপ পড়ছে বেইজিংয়ের ওপর। চালু করতে হতে পারে বিভিন্ন শিল্পের জন্য প্রণোদনা।
চীনা কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে কেউ বঞ্চিত করেনি। কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রই সবকিছুর বাইরে ছিল। উৎপাদনের চেয়ে সবসময় এই দেশের চাহিদা বেশি ছিল। নিজেকে বঞ্চিত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না করে যুক্তরাষ্ট্রের এখন উচিত, বিশ্বে অবাধে বাণিজ্যের সুযোগ দেয়া।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ বলছে, তিন দেশে এই সফরের মধ্য দিয়ে শি জিনপিং প্রতিষ্ঠা করবেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প নয়, বেইজিংই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রকৃত বন্ধু। আশিয়ানের ১০ দেশের ওপর শুল্কারোপ করায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর এমনিতেই ক্ষুব্ধ এই অঞ্চলের দেশগুলো। এরমধ্যে শি জিনপিংয়ের সফর যেন দিচ্ছে আশার বাণী।
এদিকে বিরল খনিজ এখনও চীনের কৌশলগত সম্পদগুলোর একটি। ছয় বছর ধরে বিরল খনিজের বাজারে আধিপত্য রয়েছে চীনের। নতুন করে শুরু হওয়া এই বাণিজ্য যুদ্ধে একে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে বেইজিং। খনিজগুলো আইফোন থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ১৭ টি ধাতুকে বিরল হিসেবে ধরা হয়, যেগুলো কয়েকটি দেশেই পাওয়া যায়, যুক্তরাষ্ট্রসহ। কিন্তু এগুলোর খনন অনেক বেশি ব্যয়বহুল আর পরিবেশ দূষণে সহায়ক।
এই বিরল খনিজের ৬১ শতাংশই উৎপাদন করে চীন। নিয়ন্ত্রণ করে ৯২ শতাংশ বিরল ধাতুর বাজার। যে কারণে এই ইস্যুকে বাণিজ্য যুদ্ধে সহজেই ব্যবহার করতে পারে বেইজিং, এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।