যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি চলমান থাকা অবস্থাতেই শুক্রবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ বিমান হামলা চালালো ইসরাইলি বাহিনী। এতে বেশ কয়েকজন হতাহতের শিকার হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট সেনাপ্রধান জোসেফ আউন লেবাননের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার একদিন না যেতেই প্রাণঘাতি এই হামলা চালিয়ে আগুনে ঘি ঢাললো ইসরাইল।
এ অবস্থায় সমালোচনা থেকে নিজেদের রক্ষায় এখনও লেবাননের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি মেনে চলার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। তবে ইসরাইলি নাগরিকদের জন্য হুমকি বিবেচনায় হিজবুল্লাহ ব্যবহৃত অস্ত্র বোঝাই যানবাহনে শুক্রবার হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি তাদের।
একইদিন রাজধানী সানাসহ হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমনের বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। যুদ্ধ বিমান থেকে চালানো বিধ্বংসী আক্রমণে সানার কাছে থাকা একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, হোদেইদাহ এবং রাস ইসা সমুদ্রবন্দরের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলেও দাবি করা হচ্ছে।
হুথিদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নিতে শুক্রবার ইয়েমেনে এই হামলা চালানোর দাবি করেছে ইসরাইল। তবে ইসরাইলি হামলা প্রতিহত করা ছাড়াও উত্তর লোহিত সাগরে মার্কিন বিমানবাহী রণতরি এবং বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার দাবি করেছে ইরান সমর্থিত হুথিরা।
ইয়েমেনে হুথির সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারিয়া বলেন, ‘গত ৪৮ ঘণ্টায় বেশ কয়েকটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল উত্তর লোহিত সাগর অঞ্চলে আমেরিকান বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস হ্যারি এস. ট্রুম্যান এবং তার বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজকে লক্ষ্য করে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা। এছাড়া হাইফা বন্দর এলাকায় ইসরাইলি শত্রুদের চালানো বেশ কয়েকটি হামলা প্রতিহত করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের লক্ষ্যবস্তুতেও সফলভাবে হামলা চালানো হয়েছে।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন হোয়াইট হাউজ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঠিক তখনই মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে বর্বরতার মাত্রা বাড়াচ্ছে ইসরাইল। হামাসের সঙ্গে বন্দিবিনিময় ও যুদ্ধবিরতি চুক্তি আলোচনার মধ্যেও গাজা উপত্যকায় চলছে আগ্রাসন।
শুক্রবারও অবরুদ্ধ ভূখণ্ডজুড়ে হামলা চালিয়ে বহু নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে নেতানিয়াহুর সেনারা। এতে ১৫ মাস ধরে চলমান যুদ্ধে প্রাণহানি বেড়ে ৪৬ হাজার ছাড়িয়েছে।
খাদ্য, ওষুধসহ মানবিক সহায়তা সংকটে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে ২০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীর। এরমধ্যে শুক্রবার ভোর থেকে গাজার হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুৎ নেই, জেনারেটরের জ্বালানিও ফুরিয়ে গেছে।
এতে রোগীদের জন্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগেই গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হবে বলে আশাবাদী বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা কিছু অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি। আমি এখনও আশাবাদী যে আমরা বন্দী বিনিময় করতে সক্ষম হব। হামাস এখনও বিনিময়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে আমি মনে করি আমরা হয়তো এটি সম্পন্ন করতে সক্ষম হব। আমাদের এটি সম্পন্ন করতে হবে।’
এদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরেও দখলদারিত্ব তৎপরতা বাড়িয়েছে ইসরাইল। এর অংশ হিসেবে চালানো হচ্ছে গ্রেপ্তার অভিযান। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণে পশ্চিম তীরে অন্তত সাড়ে ৮শ' ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৪,৩০০ জনকে।