উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে প্রাণহানি বেড়ে ৫

ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলের কবলে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে। এখন পর্যন্ত ৫ জনের প্রাণহানি। ৪টি আলাদা দাবানলে পুড়েছে হাজারের বেশি স্থাপনা ও কয়েক হাজার একর বনাঞ্চল ও জনপদ। শহর ছেড়ে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা। পানির সংকট ও তীব্র বাতাসে দ্রুতই আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ জো বাইডেনের।

ভয়াবহ দাবানলে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন বাসিন্দারা। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলস শহরে এখনো সক্রিয় চারটি আলাদা দাবানল। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে দাবানলে পুড়ছে লস এঞ্জেলস। কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না শহরের আগুন।

দাবানলে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে গাড়ি, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল ও বিভিন্ন স্থাপনা। তীব্র বাতাসের সঙ্গে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে। একদিনের মধ্যেই পুড়ে গেছে ২০ হাজার একরের বেশি অঞ্চল। এছাড়া দাবানলের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ১৩ হাজার ভবন। হতাহত বেশ কয়েকজন।

আতঙ্কে সময় কাটাচ্ছেন বাসিন্দারা। এরই মধ্যে দেড় লাখ বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আগুনে অনেকের বাসাবাড়িতে বিস্ফোরিত হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার। ঝুঁকি এড়াতে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে গ্যাস সরবরাহ ও বিদ্যুৎ সংযোগ। এতে বিপাকে পড়েছেন শহরের কয়েক লাখ বাসিন্দা।

শহরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের পাশের বাসায় সিলিন্ডারের দুটি বড় বিস্ফোরণ হয়। তখনই আমরা বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসি।’ আরেকজন বলেন বলেন, ‘আগুনের লেলিহান শিখা ছিল ভয়াবহ। ধীরে ধীরে আমাদের ঘরবাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।’ ক্ষতিগ্রস্ত একজন বলেন, ‘বাতাসের বেগ বেড়ে যাওয়ার পর আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তখন দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।’

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুষ্ক আবহাওয়ার সঙ্গে বাতাসের তীব্রতা বাড়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিনে দিনে বৃষ্টিও কমে গেছে লস অ্যাঞ্জেলেসে।

ক্যালিফোর্নিয়ার জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জন ডুমাস বলেন, ‘লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের আকাবাক পাহাড়ি অঞ্চলে বাতাসের তীব্রতা অনেক। যা ঘণ্টায় প্রায় এক থেকে দেড়শ কিলোমিটার গতিবেগ। যার কারণে এক জায়গার আগুন খুব দ্রুত অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। জ্বলন্ত কয়লা বাতাসের অন্য জায়গায় পড়ে আবার অগ্নিকাণ্ড ঘটায়।’

একদিকে পানির সংকট অন্যদিকে প্রচণ্ড বাতাসে আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। সবগুলো দাবানলই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে জানায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। লাল হয়ে আছে লস অ্যাঞ্জেলসের আকাশ। কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে আছে পুরো শহর। চারদিকে শুধু পোড়া ধ্বংসস্তূপ।

লস অ্যাঞ্জেলেস পানি ও বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান জ্যানিস কুইনোনস বলেন, ‘পানির সংকটে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, গ্রাহকদের জন্য এই মুহূর্তে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হচ্ছে। দাবানলের আগুন নিয়ন্ত্রণে আমরা আমরা শহরের পানি ব্যবস্থাকে কাজে লাগাচ্ছি। যা সত্যিই চ্যালেঞ্জিং।’

ভয়াবহ দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল পরিদর্শনে ক্যালিফোর্নিয়া সফরে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ সময় তিনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘দাবানলের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং ক্ষয়ক্ষতি পুনর্গঠনে যা সাহায্য দরকার তার সবটুকুই দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছে সরকার। এটি অনেক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ক্ষয়ক্ষতি পূরণেও সময় লাগবে বাসিন্দাদের। ফেডারেল সরকার আপনাদের পাশে আছে সবসময়।’

লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের ইতিহাসে এটি ছিল সবচেয়ে বিধ্বংসী দাবানল। এ সময়ে দাবানলের ঘটনা স্বাভাবিক হলেও, গেল ২৫ বছরে এতো ভয়াবহ রূপ নেয়নি।

এএম