গেল সেপ্টেম্বরে লেবাননের দক্ষিণে ইসরাইলি প্রতিরক্ষাবাহিনীর স্থলাভিযান শুরুর পর বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন অন্তত ১৩ লাখ বাসিন্দা। গেল বুধবার ইসরাইলের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পর ধীরে ধীরে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন এই হতভাগ্য লেবানিজরা। শুক্রবার সকাল থেকে লেবানন সীমান্তগামী আন্তর্জাতিক মহাসড়কে চোখে পড়েছে গাড়ির লম্বা লাইন। আবারও যেকোনো সময়ে হামলা হতে পারে এই আশঙ্কার পাশাপাশি ঘরমুখী বাসিন্দাদের চোখমুখে ছিল বাড়ি ফেরার আনন্দও
একজন লেবানিজ বলেন, ‘অবশেষে বাড়ি ফিরছি। সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা, তিনি আমাদের বিজয় এনে দিয়েছেন। পাখিটাকে ছেড়ে আসতে পারিনি। ওকে নিয়েই ঘর ছেড়েছিলাম।’
আরেক ফেরত আসা লেবাননের নাগরিক বলেন, ‘মোটরসাইকেল চালিয়ে বৈরুত থেকে হোমিন পর্যন্ত এসেছি। ট্রাফিকে আটকা পড়তে চাই না।’
যদিও যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ৪র্থ দিনে এসেও পুরোপুরি অনিশ্চতা কাটছে না গৃহহীন লেবানিজদের। দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামে বাসিন্দাদের ফিরতে না দেয়ায়, ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বিভাগের ওপর চটেছেন স্থানীয়রা।
যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসলেও গেল বৃহস্পতিবার লেবানন সীমান্তে পাল্টাপাল্টি হামলা চালায় ইসরাইল-হিজবুল্লাহ। যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ ও এর কার্যকরিতা নিয়ে যখন আন্তর্জাতিক মহল নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ঠিক তখন আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রস্তাবে সম্মত হয়ে লেবানিজ সরকারকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন হিজবুল্লাহ প্রধান। যদিও ইসরাইলকে সতর্ক করে বলেছেন, রণাঙ্গনে হিজবুল্লাহ শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে; লেবাননের ভূখণ্ড সুরক্ষিত রাখতে সংগঠনের সাহসী যোদ্ধারা পিছপা হবে না।
হিজবুল্লাহ প্রধান নাইম কাসেম বলেন,‘যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কার্যকরে লেবাননের সেনাবাহিনীকে সবধরণের সহায়তা করবে হিজবুল্লাহ। কিছু সমস্যা ও মতপার্থক্য থাকবেই। আমরা মনে করি, দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখা লেবানিজ সেনাবাহিনীর প্রধান কাজ। সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ও কর্মকর্তাদের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখে বলছি, আমাদের মাতৃভূমির রক্ষাণাবেক্ষণ ওনারাই করবেন।’
এদিকে, হিজবুল্লাহ-ইসরাইল যুদ্ধবিরতির আলোচনায় চাপা পড়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ। শুক্রবারও অবরুদ্ধ গাজার বেইত লাহিয়া শহরে প্রাণ গেছে অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনির, পুরো উপত্যকায় নিহত অন্তত ১শ। যদিও গৃহহীন এই ফিলিস্তিনিদের কাছে ইসরাইলি যুদ্ধবিমানের চেয়েও ভয়ংকর হয়ে উঠছে খাবারের সংকট। চলতি মাসে গাজায় অন্তত ১০০টি ত্রাণ বোঝাই ট্রাকে লুটপাট হয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার প্রধান বলছেন, ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর গেল ১৩ মাসে এটিই সবচেয়ে আশঙ্কাজনক ত্রাণ লুটের ঘটনা।
নেতানিয়াহু বাহিনীর আগ্রাসন অব্যাহত আছে অধিকৃত পশ্চিমতীরেও। ৭ দিনে শিশুসহ প্রাণহানি হয়েছে অন্তত ৯ জনের। এছাড়া, শুক্রবার ইহুদি যাত্রী বহনকারী একটি বাসে বন্দুক হামলা চালায় এক ফিলিস্তিনি। এতে ৮ জন আহত হলে একপর্যায়ে ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে ঐ হামলাকারীও নিহত হন।
অন্যদিকে, গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ও চলমান সংঘাতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে শুক্রবার সমাবেশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। একই দিনে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে র্যালি করেছে মেক্সিকানরা। কিউবার হাভানায় তরুণদের উদ্যোগে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অনুষ্ঠিত হয় কনসার্ট। এছাড়া, গাজা যুদ্ধে হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে গণসমাবেশ করেছেন ইয়েমেনের বাসিন্দারা।