গেল একবছর ধরে হামাস-ইসরাইল যুদ্ধের খেসারত দিচ্ছেন হতভাগ্য ফিলিস্তিনিরা। মধ্য গাজার এই শরণার্থী শিবিরের পরিবেশ দেখে বোঝার উপায় নেই, গেল বৃহস্পতিবার রাতেও কয়েক দফায় মিসাইল হামলা হয়েছে এই অঞ্চলটিতে। উত্তর গাজার বেত লাহিয়া শহরের বাসিন্দাদের ঘুম কেড়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর অতর্কিত অভিযান।
নেতানিয়াহু বাহিনীর তাণ্ডব চলছে লেবাননেও। বৃহস্পতিবার বালবেক অঞ্চলে ইসরাইলি হামলায় অন্তত অর্ধশত বাসিন্দা নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আহতের সংখ্যা ১শ ছাড়িয়েছে।
চলমান এই উত্তেজনার মধ্যে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আলাদত বা আইসিসি। আদালতের এই রায়কে ইহুদি বিদ্বেষী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরাইলের রাষ্ট্রপ্রধান বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিক হত্যার অভিযোগ আনা হলো। অথচ, নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি এড়াতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইসরাইলি নাগরিকদের সুরক্ষার প্রশ্নে আমরা যে যুদ্ধে নেমেছি, পক্ষপাতদুষ্ট ও ইহুদিবিদ্বেষী কোনো সংগঠনের রায় তা বন্ধ করতে পারবে না।’
নিজ দেশে দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হলেও নেতানিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির তীব্র সমালোচনা করছেন ইসরাইলি নাগরিকরা। যদিও যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে নেতানিয়াহুকে বারবার কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে আসছেন ইসরাইলি জিম্মি পরিবারের সদস্যরা।
এই রায় সমর্থন করছি না। এই রায় মেনে নেয়ার অর্থ, ইহুদি সম্প্রদায় বা ইসরাইল রাষ্ট্রের ওপর হামলা হলেও তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবেন না। হামাস আমাদের ওপর হামলা করেছে, তারা সেটাকে সমর্থন করছেন।
আইসিসির এই রায় প্রত্যাখান করে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যঁ পিয়ের বলেছেন, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করতে অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটার কেন এতটা তাড়াহুড়ো করেছেন তা ওয়াশিংটনের কাছে পরিষ্কার না।
যদিও এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরেল। এই প্রথম মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে ইউরোপ ও আমেরিকার সরাসরি পৃথক অবস্থান নিয়েছে। যা নেতানিয়াহুর জন্য সুখকর কোনো খবর নয় বলে দাবি করছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
আইসিসির পরোয়ানা নতুন আশার জন্ম দিয়েছে উল্লেখ করে এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রশাসন। আর যুদ্ধাপরাধী যেই হোক না কেন, তাকে বিচারের আওতায় আসতেই হবে এমন অভিমত প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের।
তবে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান জানালেও নেতানিয়াহুর সাথে আলোচনায় বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, জাতিসংঘ সবসময়ই চায় আইসিসি স্বাধীনভাবে তার তদন্ত ও বিচারকাজ সম্পন্ন করুক। কিন্তু যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তা ও জিম্মিদের নিঃশর্ত মুক্তির বিষয়ে আলাপের সুযোগ থাকলে জাতিসংঘ মহাসচিব তা প্রত্যাখান করতে পারবেন না।
মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে বারবার আলোচনায় এসেছে ইরানের পরমাণু শক্তি। এবার, দেশটির পরমাণু সক্ষমতা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পেতে বৃহস্পতিবার নতুন একটি প্রস্তাব পাশ করেছে ইউএন অ্যাটোমিক ওয়াচডগ। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পরমাণু সক্ষমতার অগ্রগতির বিষয়ে ইরান যে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছে তা বাদ দিয়ে সঠিক প্রতিবেদন হাজির করে সর্বাত্মক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রস্তাবনা পাশের আগে এই এজেন্সির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই ইরানের পরমাণু সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছিল। বিশেষ করে এজেন্সির সাথে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই শেষ মুহূর্তে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেয়ায় ইরান বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে এমন অভিযোগ তাদের। ইউএন অ্যাটোমিক ওয়াচডগের নতুন এই প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে চীন ও রাশিয়া। ১৯ সদস্য রাষ্ট্র প্রস্তাবের পক্ষে রায় দিলেও, ভোট দানে বিরত ছিল ১২টি দেশ।