গাজায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর আগ্রাসন। যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার, তুরস্কসহ আরও অনেক রাষ্ট্রই যুদ্ধবিরতি কার্যকরে দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমঝোতার চেষ্টা করেছে বহুবার। এমনকি যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন একাধিকবার মধ্যপ্রাচ্য সফলে গেলেও, প্রতিবারই তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। অবশেষে অনেকটা হতাশ হই হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মধ্যস্থতার চেষ্টা থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে কাতার।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, দুই পক্ষ যদি আগ্রহ নিয়ে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়, তবেই কেবল কাতার মধ্যস্থতার চেষ্টা করবে, তার আগে আর নয়। তবে সেক্ষেত্রে প্রবল রাজনৈতিক সদিচ্ছা দুই পক্ষেরই থাকতে হবে। বর্তমানে হামাসের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে ইরান, তুরস্ক ও লেবাননের।
এদিকে, কাতারের এই ঘোষণার পর গাজা আর লেবাননে হামলার তীব্রতা আরও বাড়িয়েছে আইডিএফ। দুই দিনে শতাধিক বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গাজার উত্তরাঞ্চলে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে প্রতিদিনই হামলা করছে আইডিএফ। জাতিসংঘের আশঙ্কা, উত্তর গাজার পরিস্থিতি এতটাই মানবেতর যে খুব দ্রুত সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হবে। সংস্থাটি আরও জানায়, এখন পর্যন্ত গাজায় যাদের মৃত্যু হয়েছে, এদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, ‘গাজায় আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন হচ্ছে। সব ধরনের তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই সংঘাত সহিংসতা দ্রুত বন্ধ করা প্রয়োজন। দ্রুতই বন্দিদের মুক্ত করতে হবে। গাজায় ত্রাণ সরবরাহে এখন আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।’
এদিকে, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলেও বিভিন্ন শহরে ড্রোন আর যুদ্ধবিমান দিয়ে সমানে হামলা করে যাচ্ছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী। ইসরাইলি সেনাদের ওপর হামলা করেছে হিজবুল্লাহও। এই সংঘাতে দেশটিতে বেসামরিক মানুষ নিহতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে। লেবানন আর সিরিয়া সীমান্তেও হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। জাতিসংঘ বলছে, ইসরাইল আর লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সংঘাত শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত লেবানন থেকে সিরিয়ায় পালিয়েছে প্রায় ৫ লাখ মানুষ।
হামাস-ইসরাইল এই সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও। ফিলিস্তিনি নাগরিকদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরাইলের বিমান ঘাঁটিতে হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক রকেট হামলা চালানোর দাবি করেছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের একটি ড্রোনও ভূপাতিত করার দাবি গোষ্ঠীটির।
হুথি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারেয়া বলেন, ‘ফিলিস্তিনের নেগেভ অঞ্চলে থাকা ইসরাইলের নেভাতিম বিমান ঘাঁটিতে হামলা করেছি প্যালেস্টাইন টু মিসাইল দিয়ে। আমেরিকান এমকিউ নাইন ড্রোন ধ্বংস করে দিয়েছি। এখন পর্যন্ত এ ধরনের ১২ টি আকাশযান ধ্বংস করেছি আমরা। ফ্লাড আল আকসা যুদ্ধ আমরা চালিয়ে যাব।’
গেল বছরের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত লোহিত সাগরে শতাধিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে হুথি বিদ্রোহীরা। এতে, এক ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে বিশ্ব বাণিজ্যে।