এ যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। একদিকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী ও সামরিক বাহিনী।
রাতভর তাদের হামলায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এ সময় পুড়িয়ে দেয়া হয় ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় অর্ধশত ফিলিস্তিনিকে। তাদের এই সংঘর্ষ নতুন করে সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ।
যুদ্ধবিরতি ও গাজার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের জরুরি বৈঠকে গাজার পুনরুদ্ধারের কথা তুলে ধরেন সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা। নিরাপত্তা পরিষদে ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞার কড়া সমালোচনা করে বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ। এদিকে, আগামী রোববার থেকে ইসরাইলি ভূখণ্ড ও তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে মানবিক সহায়তার কার্যক্রম বন্ধের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে যাচ্ছে।
তবে হামাস-ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের আশা করছে জাতিসংঘ। এই প্রক্রিয়াটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে যাবে এবং সব জিম্মিরা মুক্তি পাবেন। এমনটাই প্রত্যাশা সংস্থাটির।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন, স্থায়ীভাবে শত্রুতা বন্ধ, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং গাজার পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনে নিরাপত্তা পরিষদসহ সকল সদস্য রাষ্ট্রকে আহ্বান জানাচ্ছি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা যাবে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকেও গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। যাতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো সবার সামনে তুলে ধরতে পারে।’
তবে গাজার যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নবনিযুক্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনটি ধাপের বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়ে আছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘হামাস-ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী না। এটা যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ নয়, এটা তাদের যুদ্ধ। তবে এ ব্যাপারের আমার আত্মবিশ্বাস খুব একটা নেই। আমার ধারণা ইসরাইলও কিছুটা দুর্বল হয়ে গেছে। গাজার ছবি দেখেছি, উপত্যকাটি একটি বিশাল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেটি পুনরুদ্ধারে ভিন্নভাবে ভাবতে হবে।’
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন ফিলিস্তিনিরা। তবে ঘরবাড়ি হারা গাজাবাসী ভুগছে খাদ্য ও জরুরি চিকিৎসা সংকটে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, গাজার ১০ লাখের বেশি মানুষের জন্য তিন মাসের খাদ্য তাদের কাছে মজুত আছে।
এদিকে, ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হচ্ছে একের পর এক মরদেহ। গেল একদিনে উদ্ধার করা হয়েছে আর ৬৬টি মৃতদেহ। গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে বোমাবর্ষণে মরদেহগুলো কয়েক মাস ধরে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছিল।
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর দেড় শতাধিক মরদেহ উদ্ধার হয়। গাজায় প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজারের বেশি। আহত লাখের ওপর।