ফুয়াদ শুকুর, ইসমাইল হানিয়া, হাসান নাসরাল্লাহর পর সবশেষ ইয়াহিয়া সিনওয়ার। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলার মূল কারিগর হিসেবে খ্যাত সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। ৬১ বছর বয়সী এই হামাস নেতা বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন গাজা উপত্যকার টানেলের ভেতরে থেকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দক্ষিণাঞ্চলের রাফার তাল আল সুলতান এলাকায় পলাতক অবস্থায় তাকে হত্যা করেছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। গোয়েন্দা বাহিনী তার খোঁজ করছিল কয়েক মাস ধরে।
আইডিএফয়ের প্রকাশিত ড্রোনের ভিডিওতে দেখা যায়, বিধ্বস্ত ভবনে ধুলোয় ভরা কক্ষে লাল সোফায় বসে আছেন একজন। আইডিএফ নিশ্চিত করে এই ব্যক্তিই ইয়াহিয়া সিনওয়ার। উত্তরাঞ্চলে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। তবে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সিনওয়ারের সঙ্গে কোনো বন্দি ছিল না। ইসরাইলের পুলিশ জানিয়েছে, ডিএনএ আর আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে তার লাশ শনাক্ত করা হয়েছে।
ইসরাইলি পুলিশের ফরেনসিক ইউনিটের কমান্ডার আলিজা রাজিয়েল বলেন, 'লাশ আসার সঙ্গে সঙ্গে ইসরাইলি পুলিশের ডেটাবেজ থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলিয়ে দেখি আমরা। এরপর ফরেনসিকে ডিএনএ প্রোফাইল পাঠাই। ইয়াহিয়া সিনওয়ারের সঙ্গে মিলে যায়। ইসরাইলি পুলিশ আর কারা কর্তৃপক্ষের কাছে সব তথ্য রয়েছে।'
হামাস নেতাকে হত্যার পর প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে গাজায় যুদ্ধের শেষের শুরু হয়েছে। যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। বন্দিদের মুক্ত না করা পর্যন্ত গাজায় পুরোদমে যুদ্ধ চলবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, 'হলোকাস্টের পর সিনওয়ারই ইসরাইলে সবচেয়ে বড় গণহত্যার পরিকল্পনাকারী। তাকে সরিয়ে দেয়া খুব জরুরি ছিল। হামাস আর কখনও গাজা শাসন করতে পারবে না। বন্দিদের যদি কোনো ক্ষতি হয়, তাদের ছেড়ে দেবো না। খুঁজে বের করে ন্যায়বিচার করবো। যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। গাজা আর বৈরুতকে বলতে চাই, আপনাদের ওপর থেকে কালো ছায়া সরে গেছে।'
হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার সংবাদে স্বস্তি প্রকাশ করেছে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, এই হত্যাকাণ্ড হামাসকে দুর্বল করে দিয়েছে। এই অর্জনে নেতানিয়াহুকে অভিনন্দন জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বন্দিদের মুক্ত করার পথ এখন সহজ হলো।
জো বাইডেন বলেন, 'নেতানিয়াহুকে অভিনন্দন। সিনওয়ারের হাতে অনেক রক্ত, মার্কিনদের রক্ত, ইসরাইলিদের রক্ত। এখন যুদ্ধবিরতির দিকে যাওয়া উচিত। পাশাপাশি বন্দিদের মুক্ত করে আনা প্রয়োজন। অ্যান্টনি রিঙ্কেনকে ইসরাইল পাঠাচ্ছি। গাজাকে কীভাবে নিরাপদ করা যায়, সেই বিষয়ে ভাবতে হবে।'
যদিও ইরান বলছে, এই হত্যা আরও শক্তিশালী করবে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে। এদিকে এই ঘটনার পর ইসরাইলের বিরুদ্ধে নতুন উদ্যোমে আগ্রাসনের হুমকি দিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ইসরাইলের সাধারণ মানুষ সিনওয়ারের মৃত্যু উদযাপন করলেও গাজাবাসী বিশ্বাসই করতে পারছে না হামাস নেতা আর নেই। তীব্র নিন্দা জানিয়েছে মিশর, জর্ডানসহ অনেক দেশ।
এদিকে ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার অভিযানের মধ্যেই গাজা আর লেবাননেও পুরোদমে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইল। বৃহস্পতিবারও গাজার উত্তরাঞ্চলে একটি স্কুলে ইসরাইলি বিমান হামলায় ঘটেছে হতাহতের ঘটনা। লেবাননেও বাড়ছে ইসরাইলি আগ্রাসন। সিনওয়ার হত্যার মধ্য দিয়ে এই মধ্যপ্রাচ্যে সহসা উত্তেজনার অবসান হচ্ছে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।