মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

যুদ্ধে অস্থির বহির্বিশ্ব, অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির আগেও রাশিয়া থেকে ৬০ শতাংশ জ্বালানি তেল আমদানি করতো ইউরোপ।

তবে ইউক্রেনে সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে ইউরোপের নিষেধাজ্ঞায় এখন এশিয়া ও আফ্রিকার সঙ্গে রাশিয়ার তেল বাণিজ্য হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাশিয়াকে মূল্যছাড়ে বিক্রি করতে হচ্ছে জ্বালানি তেল। আগে যেখানে ২ শতাংশ মূল্যছাড় ছিল, এখন সেখানে দিতে হচ্ছে ২০ শতাংশ মূল্যছাড়।

ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযানের সময়কালে এশিয়ার সঙ্গে তেল বাণিজ্য বেড়েছে ৫৬ শতাংশ, আফ্রিকার সঙ্গে বেড়েছে ১৪৪ শতাংশ। আকষর্ণীয় মূল্যছাড়ে চীন আর ভারতের চোখ পড়েছে রাশিয়ায়। ২০২৩ সালে ৪৮ শতাংশ বেড়েছে রাশিয়ার জ্বালানি তেল রপ্তানি।

বিশ্ব বাণিজ্য প্লাটফর্ম কেপলার বলছে, ২০২৩ সালে আফ্রিকার দেশগুলোতেও রুশ জ্বালানি রপ্তানি রেকর্ড বেড়েছে। কিন্তু মূল্যছাড়ে কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রুশ অর্থনীতি।

এদিকে রাশিয়ার অর্থনীতিতে এখন বাড়তি চাপ সামরিক খাতে ব্যয়। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে সামরিক খাতে ব্যয় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এই খাতে ব্যয় বাড়াতে গিয়ে রাশিয়াকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোসহ জরুরি খাতে ব্যয় কমাতে হয়েছে। তবে অনেক নাগরিকই সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ায় দেশটির বেসরকারি খাতে কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসংস্থান পরিপূর্ণ করতে প্রয়োজন ছিল ২৩ লাখ কর্মী।

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের অবস্থা আরও করুণ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বলছে, যুদ্ধের বছর দেশটির অর্থনীতি ৩৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। আর বিশ্বব্যাংক বলছে, যুদ্ধের আগের তুলনায় যুদ্ধের প্রথম বছর দেশটিতে চরমভাবে দারিদ্র্য বেড়েছে।

নানা সংঘাত-সহিংসতায় মধ্যপ্রাচ্য আর আফ্রিকায় পর্যটক আগমন কমে গেছে। এশিয়া থেকে ইউরোপে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের পথ লোহিত সাগর আর সুয়েজ খালে হুতিদের আক্রমণে শিপিং খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে। গালফ অব এডেন আর বাব এল মান্দেব ব্যবহারে মালিকপক্ষকে বাড়াতে হয়েছে ইন্স্যুরেন্স খরচ আর ক্রুদের বেতন। অনেক শিপিং কোম্পানি কেপ অব গুড হোপ বিকল্প রুট ব্যবহার করছে, এতে খরচও বেড়ে গেছে। এছাড়া বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে বেড়ে গেছে জ্বালানির চাহিদা।

একইভাবে আকাশপথে পণ্য পরিবহন বেড়েছে। অনেক বেশি ব্যয়বহুল হওয়ায় বিভিন্ন কোম্পানি প্রথমে কার্গো জাহাজে এরপর কার্গো বিমানে করে পণ্য সরবরাহ করছে। এতে করে চীনের সমুদ্রবন্দর থেকে ইউরোপের বিমানবন্দর পর্যন্ত পণ্য পৌঁছাতে ১৬ থেকে ২১ দিন সময় লাগছে। সমুদ্রপথের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম খরচে আর দ্রুতগতিতে সরবরাহ হচ্ছে পণ্য। সমুদ্র দিয়ে চীন থেকে ইউরোপে সুয়েজ খাল দিয়ে পণ্য পরিবহনে সাধারণত সময় লাগে ৩০ থেকে ৪৫ দিন। জানুয়ারিতে এশিয়া থেকে ইউরোপে সমুদ্র আর আকাশপথে বেড়েছে পণ্য বাণিজ্য।

এদিকে সুয়েজ খাল দিয়ে জাহাজ চলাচল তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। এরপরও অনেক শিপিং কোম্পানি ব্যবহার করছে এই রুটগুলো। তবে মায়েরস্ক ও হাপাগ লয়েডের মতো কোম্পানি কেপ অব গুড হোপ ব্যবহার করছে, প্রয়োজন পড়ছে অতিরিক্ত আরও ৩০ লাখ ডলারের জ্বালানি। সময় লাগছে আরও ১৪ দিন বেশি, আর এই অস্থিরতার প্রভাব পড়ছে বিশ্ব বাণিজ্যে।