দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিশ্ব রাজনীতির অনেক সমীকরণ বদলে ফেলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত তিন বছর পূর্ণ হতেই কিয়েভের ওপর যুদ্ধের দায় চাপাচ্ছে ওয়াশিংটন। আর, রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের এই নতুন অধ্যায়ে, ইউক্রেনের শেষ আশ্রয় হয়ে উঠছে ইউরোপ।
ইউক্রেন সংঘাত বন্ধে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের জরুরি অধিবেশনের ভোটাভুটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ছায়াসঙ্গী হয়েছে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশ। আর সেখানে ওয়াশিংটনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে বন্ধু রাষ্ট্র যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণ পরিষদের ১১তম অধিবেশনের এই ভোটাভুটি- বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দেয়।
সিএনএন ওয়ার্ল্ডের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ক্রিস্টিন অকরেন্ট বলেন, ‘ট্রাম্প বারবার বলছেন মার্কিন কূটনীতির পুরনো রীতি পাল্টে ফেলবেন তিনি। নীতিগত কৌশলে আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। কিন্তু একটি বিষয় সত্যিই অবিশ্বাস্য। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে রাশিয়া, ইরান এমনকি উত্তর কোরিয়ার মতো দেশ।’
ইউক্রেন যুদ্ধ চতুর্থ বছরে পদার্পণের দিন কিয়েভে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পাশে ছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও ইউরোপীয় কমিশন প্রধানের মতো বিশ্ব নেতারা। তবে, পশ্চিমা বলয়ের এই আচরণে বেশ ক্ষুব্ধ রুশ প্রেসিডেন্ট। ক্রেমলিনের অভিযোগ, ইউরোপীয় দেশগুলো শুরু থেকেই শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের পর বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন সফরে যাবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সফরের আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, রাশিয়াকে দুর্বল করে দিতে জি সেভেন জোটের নেতাদের আরও আগ্রাসী ভূমিকা রাখতে হবে। প্রয়োজনে ঝুঁকি নেয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন কিয়ার স্টারমার। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ইউক্রেন ও ইউরোপকে অগ্রাহ্য করায় এবার রাশিয়াকে পাল্টা চাপে রাখার কৌশল নিচ্ছে ইউরোপ।
তবে, ইউক্রেন ইস্যুতে দ্বিমত থাকলেও সাম্প্রতিক সফরে ট্রাম্পের সঙ্গে যথেষ্ট বিনয়ী আচরণ করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের উল্টো পাশে আছে চাপা বৈরিতাও। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে ট্রান্স আটলান্টিক দূরত্ব যে আরও বেড়েছে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
ক্রিস্টিন অকরেন্ট বলেন, ‘দু'পক্ষই দেখানোর চেষ্টা করেছে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে কোনো বৈরিতা নেই। কিন্তু এটা স্পষ্ট যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে ট্রান্স আটলান্টিক দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে।’
এছাড়া, ইউক্রেনের দুর্লভ খনিজ ভাগাভাগি নিয়েও শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। খনিজের অংশীদারিত্ব দাবির পাশাপাশি ওয়াশিংটনের এই চাহিদা পূরণের ভার নিতে চাইছে মস্কো। এ থেকে বোঝা যায়, আলোচনার টেবিলে ইউক্রেনের কাছে শেষ যে অস্ত্রটি ছিল তাও বেহাত করতে চাইছেন পুতিন।
মার্কিন গণমাধ্যম বলছে, আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যেই আসতে পারে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত। কিন্তু ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ও ইউরোপের নেতারা ট্রাম্পের বিচার মানবেন কী না, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।