মৃত্যুকে সঙ্গী করে উপত্যকার এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে ছুটে চলা। কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও গাধার পিঠে চড়ে, কখনও বা আবার কপালে জোটে গাড়ি।
গেলো দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে এভাবেই জীবন চলছে গাজাবাসীর। যুদ্ধবিরতি ভেস্তে গিয়ে নতুন করে বাস্তুচ্যুত হওয়া সাধারণ ফিলিস্তিনিরা বলছেন, কোথায় যাবেন জানা নেই।
বাস্তুচ্যুত হওয়া একজন ফিলিস্তিনি বলেন, 'ইসরাইলিরা লিফলেট বিতরণ করলো এই এলাকা খালি করার জন্য। বলা হয়েছিলো এই স্থান নিরাপদ, কিন্তু না। যেই প্রান্তে যাচ্ছি সেই প্রান্তই অনিরাপদ।'
আরেকজন বলেন, 'খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের জায়গা পরিবর্তন হচ্ছে। দয়া করেন আমাদের ওপর। প্রতিদিন কেউ না কেউ মরছি। জানি না মৃত্যু থেকে কতোদিন পালিয়ে বাঁচতে পারবো।'
এরমধ্যেই জাতিসংঘ বলছে, গাজায় ১৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিলের মধ্যে ইসরাইলি হামলায় যাদের প্রাণ গেছে, সবাই নারী ও শিশু। মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, ইসরাইল যেভাবে উপত্যকায় হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে, তাতে জাতি হিসেবে ফিলিস্তিনিরা অস্তিত্ব সংকটে পড়তে যাচ্ছে। এই উপত্যকার মানবিক বিপর্যয় পৃথিবীতে নরকের সমতুল্য।
আরো পড়ুন:
জাতিসংঘরে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, 'গাজায় এখন যা হচ্ছে, মৃত্যু, ধ্বংসযজ্ঞ, বাস্তুচ্যুত করা, প্রয়োজনীয় ত্রাণ পৌঁছাতে না দেয়া, সবমিলিয়ে গাজাবাসীকে পুরো উপত্যকা ছাড়তে বাধ্য করার যে পাঁয়তারা চলছে, তাতে পুরো জাতির ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে পড়ে গেছে। ইসরাইল যেভাবে গাজাবাসীকে ক্ষমতাবলে বাস্তুচ্যুত করে যাচ্ছে, তাতে বাফার জোনের নামে এই অঞ্চলে কোন ফিলিস্তিনি অবশিষ্ট থাকবে না। জোরপূর্বক তাদের বাস্তুচ্যুত করা আর হত্যা করা মানবতাবিরোধী অপরাধ।'
ইসরাইল উপত্যকায় জরুরি সব ধরনের সহায়তা সামগ্রীর প্রবেশ বন্ধ করে দেয়ায় হাসপাতালগুলোতে চরম স্বাস্থ্যসেবা সামগ্রীর সংকট দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি, খাবার তো নেই। সেইসঙ্গে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা সামগ্রী না থাকায় অসুস্থ আর আহতদের চিকিৎসা দিতে পারছেন না স্বেচ্ছাসেবীরা। উপত্যকায় প্রাণহানিই ৫১ হাজার ছুঁইছুঁই।
এমন অবস্থায় বন্দি বিনিময় ইস্যুতে শর্ত শিথিল করেছে ইসরাইল। কায়রোতে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য যাচ্ছে হামাসের প্রতিনিধিদল।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) মিশরের মধ্যস্থতাকারীদের কাছে ইসরাইল একটি প্রস্তাব দেয়। যেখানে আগের তুলনায় কম বন্দির মুক্তি চাওয়া হয়। পাশাপাশি উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের বিষয়েও সম্মতি জানায় তেল আবিব।
আজ (শনিবার, ১২ এপ্রিল) রাতে কায়রোতে হামাসের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে ইসরাইলের চিঠি। তবে বরাবরই ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের দাবি, দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে।
এদিকে বন্দিদের মুক্ত করতে প্রয়োজনে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের দাবিতে একজোট হয়েছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। সংরক্ষিত, গোয়েন্দা বিভাগ, অবসরপ্রাপ্ত এক হাজারের বেশি সেনা সদস্য একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ইসরাইলের বিমান বাহিনীকে সমর্থন করে। যেখানে গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরাইলের সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু হুমকি দিয়েছেন, বন্দিদের মুক্ত করতে এই যুদ্ধ বন্ধের চিঠিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন, তাদের বহিষ্কারের। এই যুদ্ধের শেষ কোথায়, জানে না কোন পক্ষই।