রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকা কুরস্কে প্রবেশ করে গেলো ৬ আগস্ট থেকে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। এরইমধ্যে অঞ্চলটির সুডজা শহরের একটি গ্যাস ক্ষেত্রসহ সীমান্তের আরও কিছু অংশ দখলে নেয়ারও দাবি করছে কিয়েভ। এতে বহু জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতিও হয়েছে বলে দাবি মেস্কার।
এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে ইউক্রেনে অভিযান চালানোর চেয়ে নিজ ভূখণ্ড রক্ষায় বেশি নজর দিচ্ছে মস্কো। বেশ কয়েকটি ইউক্রেনীয় সাঁজোয়া যান ধ্বংস করা এবং ড্রোন হামলা প্রতিহত করার দাবি করেছে রাশিয়া। কিয়েভ ও সুমি অঞ্চলেও বাড়িয়েছে হামলার পরিসর। এতে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ কিয়েভের।
তবু নতুন লক্ষ্য থেকে সরেনি ইউক্রেন। এখনও রুশ ভূখণ্ডে অবস্থান করছে ইউক্রেনীয় সেনারা। ৬ দিনের মাথায় এসে এই অগ্রযাত্রার জন্য তাদের ধন্যবাদও দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার যোদ্ধারা ধীরে ধীরে রুশ ভূখণ্ডের আরও ভেতরে প্রবেশ করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এমনকি সীমান্ত অঞ্চলে মজুদ করা হচ্ছে সাঁজোয়া যানসহ অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র।
ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, 'যুদ্ধকে রুশ অঞ্চলের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের সেনাদের ধন্যবাদ জানাই। এজন্য আমি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিটি ইউনিটের প্রতি কৃতজ্ঞ। ইউক্রেন প্রমাণ করছে যে, প্রকৃতপক্ষে ন্যায়বিচার পুনরুদ্ধার করতে পারে। সেই সঙ্গে হামলারকারীর ওপর প্রয়োজনীয় চাপও সৃষ্টি করতে পারে।'
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভিযান শুরুর পর এই প্রথম রুশ ভূখণ্ডে আশ্চর্যজনকভাবে ইউক্রেনের খোলা সেনাবাহিনীর নতুন এই ফ্রন্ট লাইন নিয়ে নানা হিসেবে নিকেশ করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, আড়াই বছরের সেনা অভিযান চলার পর থেকে এটিই ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় অর্জন। তবে রুশ সীমান্ত এলাকাটি তারা আদৌ ধরে রাখতে চাইবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। পরবর্তী পদক্ষেপ যাই হোক না কেন, এই হামলা রুশদের চরমভাবে বিভ্রান্তিতে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া সামরিক সরঞ্জাম সক্ষমতা শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে কিয়েভের। ওয়াশিংটনও দাবি করছে যে, তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করে রুশ সীমান্তে হামলা চালিয়ে মার্কিন নীতি লঙ্ঘন করেনি ইউক্রেন।
বিশ্লেষকরা আরও মনে করছেন যে, এই যুদ্ধে কৌশল মোকাবিলায় ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে সামরিক বাহিনীর বড় একটি অংশ সরিয়ে নিতে বাধ্য হতে পারে রাশিয়া। যদি তাই হয়, ইউক্রেনে চালানো দখল অভিযান থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়বে মস্কো। হয়তো এই দিক বিবেচনায় ইউক্রেন থেকে নজর সরাতে হুট করেই রুশ সীমান্তকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করেছে কিয়েভ।
এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ উত্তেজনার পারদ বেড়েছে কয়েকগুণ। কুরস্কসহ ইউক্রেনের সঙ্গে লাগোয়া তিনটি সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে রাশিয়া। নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে হাজার হাজার বাসিন্দাকে। ইউক্রেনীয় সেনাদের চলমান হামলার মধ্যে কুরস্কের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে পারমাণবিক কেন্দ্রের কাজ এখনও স্বাভাবিকভাবেই চলছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি সংস্থা রোসাটম। নতুন আরেকটি পারমাণবিক কেন্দ্রের নির্মাণ এলাকা থেকে শ্রমিক সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।