২০২২ সালে ইউক্রেনে সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে ব্যস্ত, সেসময়ও মস্কোর পাশে আছে শক্তিশালী বন্ধু বেইজিং। ইউক্রেনে সেনা অভিযানের কয়েক সপ্তাহ আগেও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের কোন সীমা নেই। সেই থেকে শক্তিশালীই হচ্ছে দুই দেশের সম্পর্ক।
রাশিয়ান ফেডারেশন কাউন্সিল কমিটির পররাষ্ট্র বিষয়ক ফার্স্ট ডেপুটি চেয়ার আন্দ্রে দেনিসভ বলেন, 'রাশিয়া-চীনের সম্পর্ক পুরো বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক এতো জটিল পরিস্থিতির মধ্যেও এই দুই দেশের সম্পর্ক এতো স্থিতিশীল আছে। প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব, সমঝোতা আর সহযোগিতার উদাহরণ অন্য দেশগুলোর জন্য।'
যুদ্ধ এই দুই দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এনেছে আরও কাছাকাছি। গেলো বছরই দুই দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন পৌঁছেছে রেকর্ড উচ্চতায়। রাশিয়া থেকে সুলভ মূল্যে জ্বালানি কিনেছে চীন, আর চীন থেকে রেকর্ড ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, চীন যে ধরনের যন্ত্রাংশ রাশিয়াকে সরবরাহ করছে, তা নিজেদের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যবহার করে ইউক্রেন যুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে ক্রেমলিন।
যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বেইজিং আর হংকং ভিত্তিক ব্যাংক আর কোম্পানি যেগুলো মস্কোর সঙ্গে কাজ করছে, সেগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কের বলেছেন, সরাসরি রাশিয়ার কাছে অস্ত্র বিক্রি না করলেও প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করছে বেইজিং, যা উস্কে দিচ্ছে যুদ্ধ পরিস্থিতিকে। চীনের সেমিকন্ডাক্টর, মেশিন টুল রাশিয়ার ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যানে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ বলে দাবি করে আসলেও চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বরাবরই বলে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ন্যাটোর বিস্তৃতির প্রতিশোধ হিসেবে চলছে এই সেনা অভিযান। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শান্তি প্রতিষ্ঠার ভূমিকা রাখতে পারে। যেভাবে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের বিরোধিতা করছে বেইজিং। কিন্তু পশ্চিমারা রুশ-চীনা জোটে বেশ বিপাকে, তাদের আশঙ্কা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে দুই দেশ।
এশিয়া সোসাইটির পরিচালক অরভিল শেল বলেন, 'ইউক্রেন সংকট সমাধানে কোনভাবেই চীন অংশ নেবে না। দুই দেশের বন্ধুত্ব এখন খুবই চিন্তার কারণ। ইউরোপের জন্যও শঙ্কার, কারণ ইউক্রেন ইউরোপের। দুই দেশের নেতাই সৈরাচারে বিশ্বাসী, ক্ষোভে পরিপূর্ণ। তাই দেশের দুই দেশের মধ্যে এই বন্ধুত্ব।'
দুই দেশই পরিস্কার জানিয়েছে, উন্নয়ন আর আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিকে নিজেদের মতো করে দেখতে চান তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে বিশ্ব পরিস্থিতিকে চীন আর রাশিয়ার অনুকূলে আনতে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে রাশিয়া। চীনের পক্ষে যেকোন যুদ্ধে জড়াতেও সহযোগিতা করবে মস্কো।
ইউক্রেনে সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে পুতিনের বিদেশ ভ্রমণ কমে গেলেও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ আর ফোনালাপ হয়েছে কিছুদিন পরপরই। যদিও এই সময়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে তিনি ফোন করেছিলেন একবার।