যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে চীনের সঙ্গে সংঘাতের ইঙ্গিত জাপানের!

জাপান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা | ছবি: সংগৃহীত
0

চীনের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নিলো জাপান। চীনের পর বেইজিংয়ে থাকা জাপানি নাগরিকদের পাল্টা সতর্কবার্তা দিয়েছে তাকাইচি প্রশাসন। চীনও দেশটিতে দুটি জাপানি চলচ্চিত্রের মুক্তি আটকে দিয়েছে। তবে বাড়তে থাকা উত্তেজনার জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচিকে দায়ী করে বিশ্লেষকদের মত, যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে ও টোকিওর অর্থনৈতিক দুর্দশা গোপন রাখতে চীনের সঙ্গে সংঘাতের ইঙ্গিত দিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে চীনের সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে তাইওয়ানের নাগরিকদের আত্মরক্ষামূলক হ্যান্ডবুক দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিতর্কের শুরু জাপানের নয়া প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির দেশটির পার্লামেন্টে দেয়া একটি ভাষণকে কেন্দ্র করে। দীর্ঘদিন ধরে চলা চীন-তাইওয়ান সংঘাতে জাপান জড়িয়ে পড়তে পারে বলে সংসদে মন্তব্য করেন তাকাইচি। এরপর থেকেই তলানিতে টোকিও- বেইজিং সম্পর্ক। তাকাইচির মন্তব্যকে উস্কানিমূলক বলে আখ্যা দেয়া ছাড়াও এরইমধ্যে বেশ কয়েক দফায় চীনা নাগরিকদের জাপান ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে বেইজিং।

এবার চীনের দেখানো পথেই হাঁটলো জাপান। সাম্প্রতিক সময়ে চীনা গণমাধ্যমগুলোতে জাপান সম্পর্কে নেতিবাচক সংবাদ উপস্থাপন বাড়ায় চীনে থাকা জাপানি নাগরিকদের সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দিয়েছে টোকিও। এছাড়া জাপানিজদের চীনের জনবহুল এলাকাগুলো এড়িয়ে যাওয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।

এদিকে দুই দেশের চলমান দ্বন্দ্বের মধ্যেই দরজায় কড়া নাড়ছে জি-২০ সম্মেলন। সেখানে সংকট সমাধানে দুই দেশ বৈঠকে বসবে কিনা এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় জাপান সরকারের মুখপাত্রকে ।

জাপান সরকারের মুখপাত্র মিনোরু কিহারা বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই জাপান চীনের সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক সংলাপের ব্যাপারে সবসময় প্রস্তুত জাপান।’

শুধু চীন নয়, তাইওয়ান ইস্যুতে তাকাইচির মন্তব্যের জেরে ক্ষোভে ফুঁসছে জাপানিজরাও। অনেকের মতে, জাপানের ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি আড়াল করতে তাইওয়ান ইস্যুর আশ্রয় নিয়েছে তাকাইচি।

আরও পড়ুন:

চীনের গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আইনার ট্যানজেন বলেন, ‘যেহেতু তার কোনো শক্তিশালী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নেই, তাই তিনি সত্যকে আড়াল করছেন। তাকাইচি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু তার ভুলে গেলে চলবে না, জিডিপি বিবেচনায় জাপান একটি ঋণী দেশ।’

এছাড়া অনেকে তাকাইচির সমালোচনা করতে গিয়ে উল্লেখ করেন ১৯৭২ সালে হওয়া চীন-জাপান চুক্তির কথা।

জাপান- চীন রিলেশন সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট নোরিয়ুকি তাকামুরা বলেন, ‘চুক্তিতে স্পষ্টভাবে বলা আছে জাপান এক চীন নীতি স্বীকার করে। তাইওয়ান যে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনা ভূখণ্ডের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, এটিরও উল্লেখ আছে নথিতে। সুতরাং, চুক্তিটিকে জাপান চীন সম্পর্কের মূল ভিত্তি ধরে এটি মেনে চলা ও সমুন্নত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুশি করতে তাইওয়ানের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘাতে জড়াতে চেয়েছেন তাকাইচি। কেননা সবশেষ জাপান সফরে ট্রাম্প দেশটিকে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর আহ্বান জানান। সম্প্রতি সংসদে দেয়া বক্তব্যে এ খাতে ব্যয় বাড়ানোর কথাও জানান তাকাইচি।

আরও পড়ুন:

তাইওয়ান ইস্যুতে দ্বন্দ্বের জেরে নতুন করে চীন সরকার দেশটিতে দুটি জাপানি চলচ্চিত্রের মুক্তি আটকে দিয়েছে। দর্শক অনুভূতি বিবেচনায় সিদ্ধান্তটিকে ইতিবাচক বলছে চীনা গণমাধ্যমগুলো।

অন্যদিকে চীনের সম্ভাব্য সামরিক আক্রমণ ঠেকাতে তাইওয়ানের প্রতিটি নাগরিককে প্রতিরক্ষা হ্যান্ডবুক প্রদান করছে কর্তৃপক্ষ। গেল সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হ্যান্ডবুকটিতে শত্রুর হামলার সময় কীভাবে আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তাইওয়ান মিলিটারি প্রতিরক্ষা এজেন্সির পরিচালক শেন ওয়ে চিহ বলেন, ‘হ্যান্ডবুকটিতে সরকারের দেশটির জনগণের জন্য নেয়া নিরাপত্তা নির্দেশিকা উল্লেখিত আছে। পাশাপাশি শত্রুপক্ষ আক্রমণ করলে কীভাবে আত্মরক্ষা প্রস্তুতি নিতে হবে তাও বলা আছে। আমরা চাইলে এটির অনলাইন কপি দিতে পারতাম। কিন্তু বয়স্কদের কথা চিন্তা করে আমরা তা করিনি।’

তাইওয়ান ইস্যুকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছে চীনা পররাষ্ট্র দপ্তর। তাইওয়ান জাপানের পশ্চিম দ্বীপপুঞ্জ থকে ১১০ কিলোমিটার দূরে এবং টোকিওর জ্বালানি আমদানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দরের কাছে অবস্থিত।

এসএস