ঐতিহ্যবাহী সামরিক পোশাকের পরিবর্তে পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক গ্রহণ করেছেন বিদ্রোহী বাহিনীর প্রধান আহমেদ আল শারা।
হায়াত তাহরির আল শামসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দেয়া জুলানি নামেও এনেছেন পরিবর্তন। নিজের বাহিনী ও দেশকে নেতৃত্ব দিতে বছরের পর বছর ধরে নিজেকে গড়ে তুলেছেন তিনি।
তার নেতৃত্বে মাত্র ১২ দিনে পতন ঘটে সিরিয়ার ৫০ বছরের আসাদ সাম্রাজ্যের। সিরিয়াকে স্বৈরাচারমুক্ত করার পরপরই অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন তিনি। দেশকে পুনর্গঠনে মনোযোগ দেন আল শারা। তাই নতুন করে কারও সঙ্গে সংঘাতে যেতেও রাজি নয় বিদ্রোহী বাহিনী।
বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে অন্য দেশে থাকা ধনী সিরীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তারা। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পুনর্গঠনের মাধ্যমে আশ্বস্ত করছেন দেশের মানুষকে।
এরই মধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন আহমেদ আল শারা। বৈঠক করছেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে। সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও সামরিক বাহিনীকে নতুন করে সাজানোর কথা বলেন তিনি।
সিরিয়ার বিদ্রোহী বাহিনীর প্রধান আহমেদ আল শারা বলেন, ‘বাইরে থেকে সিরিয়ার ভেতরে অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ করা হবে তা আমরা কোনোভাবেই অনুমোদন দেব না। এমনকি বিপ্লবী দল বা এসডিএফ যেই হোক। দুর্বৃত্তদের অস্ত্রের উপস্থিতি দেশে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে। অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি আমাদের অগ্রাধিকার তালিকায় আছে।’
তুরস্কের মিত্র আসাদ সরকারের পতনের দুই সপ্তাহ পরই দামেস্ক সফরে গেলেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। সাক্ষাৎ করেছেন সিরিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ করা আহমেদ আল শারার সঙ্গে। গেল শুক্রবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছিলেন, সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায় সিরিয়ায় কুর্দি মিলিশিয়াদের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে আলোচনা করতে দামেস্ক সফরে যান তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সিরিয়ার নতুন শাসক আল-শারার সঙ্গে বৈঠকের পর তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কুর্দি মিলিশিয়ারা ভবিষ্যতে সিরিয়ায় থাকবে না। এছাড়া, সিরিয়ার ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান জানান।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, ‘সিরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও ঐক্য নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সিরিয়ার পুনর্গঠন ও ঐক্য নিয়ে আমরা পারস্পরিক বোঝাপড়ার বিষয়ে একমত হয়েছি। আমি জোর দিয়ে বলেছি সিরিয়ায় কুর্দিদের কোনো স্থান হবে না। কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সিরিয়ার জনগণের জমি দখল এবং তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ চুরি করেছে।’
লেবাননের জাতিগত গোষ্ঠীর ড্রুজ নেতা ওয়ালিদ জামব্লাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন আহমেদ আল শারা। সাম্প্রদায়িকতাকে সিরিয়ায় থেকে দূরে রেখে নতুন যুগের সূচনা করতে একমত হন দেন দুই নেতা।
দ্রুজ নেতা ওয়ালিদ জামব্লাট বলেন, ‘এই বিজয়ের মাধ্যমে সিরিয়ার জনগণকে অভিনন্দন জানাতে এসেছি। এই অঞ্চলে স্বাধীনতার নতুন সূর্য উঠবে। সিরিয়া ও লেবাননের জনগণের আশার প্রতিফলন ঘটবে।’
এদিকে, আসাদের আমলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজতে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার টানাচ্ছেন স্বজনেরা। যেখানে যুক্ত করা আছে ফোন নাম্বার ও ঠিকানা।
এমনি একজন বলেন, ‘আমার সমস্ত দিন এই ছবিগুলোর সামনে কাটে। আশায় আছি তাকে দেখার। সবকিছু সৃষ্টিকর্তার হাতে ছেড়ে দিয়েছি।’
আরেকজন বলেন, ‘কেউ বলছে আমার ভাইকে কারাগার থেকে বের হতে দেখেছে এবং আমরা তাকে ভিডিওতে দেখেছি। তবে এখন পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাইনি।’
এদিকে, ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ক্ষমতাসীন হায়াত তাহরির আল-শামের কাছে অস্ত্র জমা দিচ্ছেন। যাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক অভিযোগ নেই তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া, লুট হওয়া রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্রও ফিরিয়ে দিচ্ছেন সিরিয়ার জনগণ।