এশিয়া
বিদেশে এখন
0

তোপের মুখে মার্শাল ল' প্রত্যাহার, প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিক্ষোভ

দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারির সিদ্ধান্ত বাতিলের পক্ষে রায় দিয়েছেন দেশটির পার্লামেন্টের সদস্যরা। এই রায়ে বাতিল হয় সামরিক আইনের প্রস্তাব। এর আগে মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে আচমকাই দেশজুড়ে মার্শাল ল' জারির ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল। এর পরপরই ডাকা পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত বাতিলের প্রস্তাবে সম্মত হন ১৯০ জন সংসদ সদস্য। সামরিক আইন জারির সিদ্ধান্ত বাতিলের পর ইউন সুক ইউলের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ মানুষ।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজপথে নেমে আসে সাধারণ মানুষ। জড়ো হন পার্লামেন্ট ভবনের সামনে। একের পর এক সামরিক যান ও পার্লামেন্ট সদস্যদের গাড়ি ঠেকে সামনে এগিয়ে যান তারা। অথচ এর কয়েকঘণ্টা আগে দেশজুড়ে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল।

প্রেসিডেন্টের টেলিভিশন বিবৃতির পর জরুরি অধিবেশন ডাকেন স্পিকার উ ওন শিক। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় পার্লামেন্টের মূল প্রবেশপথ। দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় অচিরেই সামরিক আইন জারির সিদ্ধান্ত বাতিলের পক্ষে রায় দেয় ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি।

স্পিকার বলেন, 'প্রেসিডেন্টের ঘোষণা সম্পূর্ণ অবান্তর। আইনপ্রণেতাই দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় কাজ করবেন।'

অধিবেশন চলাকালে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করে ঘিরে ফেলা হয় পার্লামেন্ট চত্বর। এসময় লিবারেল ডেমোক্র্যেট পার্টির নেতা লি জে মিয়াং ঘোষণা করেন যতক্ষণ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ইয়ুন তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করবেন, বিরোধী দল পার্লামেন্ট ছেড়ে যাবে না। ধীরে ধীরে প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল ইওলের অপসারণের দাবিতে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সামনে জড়ো হন সরকারবিরোধীদের একাংশ।

দক্ষিণ কোরীয় সংবিধান অনুসারে, যুদ্ধ চলাকালে বা যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে অথবা জাতীয় পরিসরে জরুরি অবস্থা তৈরি হলে দেশের প্রেসিডেন্ট সামরিক আইন জারি করতে পারেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়ার বিধান থাকলেও, এই মুহূর্তে কোনো পরিস্থিতিতে পড়ে প্রেসিডেন্ট মার্শাল ল' জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা পরিষ্কার নয়। পাশাপাশি কোয়ীয় সংবিধান আরও বলছে, সামরিক আইন জারির ক্ষেত্রে অবশ্যই পার্লামেন্ট সদস্যদের সম্মতি প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে বিরোধী সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্লামেন্টে এমন প্রস্তাব যে টিকবে না তাও প্রেসিডেন্টের অজানা থাকার কথা নয়।

এরইমধ্যে সামরিক আইন জারির বিপক্ষে রায় দিয়েছে খোদ প্রেসিডেন্টের দল পিপল'স পাউয়ার পার্টি। শীর্ষনেতারা সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত নিয়েও। আর শেয়ারবাজারে দরপতনের আশঙ্কায় ব্যাংক অব কোরিয়ার সাথে জরুরি বৈঠকেরও ডাক দেন অর্থমন্ত্রী।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের বরাতে রয়টার্স জানায়, সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেয়ার আগে ওয়াশিংটনের সাথে কোনো আলোচনাই করেনি সিউল।

শেষ পর্যন্ত নিজের হাতে নিজের অভিশংসন ডেকে এনেছেন প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল- এমন পর্যবেক্ষণও উঠে আসছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। শেষপর্যন্ত কোন পরিণতির দিকে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া- সেদিকেই নজর থাকবে বিশ্বের।

এসএস