এশিয়া
বিদেশে এখন
0

দিল্লীতে বায়ুদূষণে উদ্বেগে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা

স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বায়ুদূষণের কবলে পড়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লী। দূষণের কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতা বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কায় হাসপাতালগুলোতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ধোঁয়া আর কুয়াশার পুরু আস্তরণে দৃষ্টিসীমা নেমে এসেছে ১০০ মিটারে। এর মধ্যে অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগে পড়েছেন রাজধানী নয়াদিল্লির অন্তঃসত্ত্বা নারীরা। যে শহর প্রাণভরে নিশ্বাস নেয়ার নিশ্চয়তাও দেয় না, সেখানে কীভাবে বড় করবেন নবজাতককে?

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির শ্রী গঙ্গা রাম হাসপাতালে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এসেছেন বর্ষা জেইন নামের অন্তঃসত্ত্বা এক নারী। গর্ভধারণের পর তেমন কোনো শারীরিক জটিলতা ধরা না পড়লেও বর্ষার কপালে চিন্তার ভাঁজ। নতুন এক আশঙ্কায় বাড়ির বাইরে বের হওয়াই বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।

বর্ষা বলেন, 'আমার বাচ্চাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। যেভাবে দূষণ ছড়াচ্ছে ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে জানি না। ডাক্তার বাসা থেকে বের হতে বারণ করেছেন। এটা ছাড়া আর তো উপায় দেখছি না।'

কোনো শহরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের বা বায়ু মান সূচক ৩০০ এর ওপর উঠলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। নয়াদিল্লিতে গেল তিন চারদিন ধরে এই সূচক ৫০০ এর আশেপাশে ওঠানামা করছে। বাতাসে ক্ষুদ্র ধাতব কণার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে দেড়শ' গুণ বেশি। এই পরিসংখ্যান থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, একজন গর্ভবতী নারী এবং তার অনাগত শিশুর জন্যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে দিল্লির বাতাস।

স্থানীয় একজন বলেন, 'বায়ুমান সূচক যেভাবে অবনতির দিকে যাচ্ছে তাতে আমাদের দুশ্চিন্তা বেড়েই চলছে। স্ত্রীর সুস্থতা নিয়ে ভীষণ উদ্বেগে আছি। এছাড়া, এমন দূষিত পরিবেশে আমার সন্তান কীভাবে বড় হবে সে ভাবনাও যাচ্ছে না।'

সেন্ট্রাল পলুশন কন্ট্রোল বোর্ডের প্রতিবেদন অনুসারে, বুধবারও (২০ নভেম্বর) নয়া দিল্লির অন্তত পাঁচটি স্পটে বায়ু মান সূচক ৫০০ এর আশেপাশে ছিল। যেখানে বায়ু মান শূন্য থেকে ৪০ এর মধ্যে থাকলে তা স্বাভাবিকের চেয়ে ভালো বলে গণ্য করা হয়, সেখানে এই এয়ার ইনডেক্স ৪০১ ছাড়িয়ে গেলে নিশ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব মায়ের স্বাস্থ্য থেকে ভ্রূণ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বারবার এমন আশঙ্কা জানাচ্ছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা। এমনটা হলে গর্ভের শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলেও মনে করেন তারা।

একজন ডাক্তার বলেন, 'বায়ুদূষণ ভ্রূণের পাশাপাশি নবজাতক এবং মায়ের উপরও প্রভাব ফেলে। দূষিত পদার্থ নাড়ি থেকে ভ্রূণ পর্যন্ত পৌঁছ যেতে পারে। এর প্রভাবে এন্ডোথেলিয়াল কোষ রক্তনালীতে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। এতে করে ভ্রূণে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। যার কারণে ভ্রূণে পুষ্টির অভাবও দেখা যায়।'

পরিস্থিতি বিবেচনায় আপাতত দিল্লি সরকারের অর্ধেক বা ৫০ শতাংশ কর্মী ও আধিকারিককে 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম', বা বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। এছাড়া পরিস্থিতি কঠোর হাতে মোকাবিলার চেষ্টা করছে 'বায়ুর গুণমান নিয়ন্ত্রক কমিশন'। দিল্লি-এনসিআর-এর অধীনস্থ এলাকাগুলোতে বন্ধ রাখা হয়েছে নির্মাণ কাজ। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় আবারও স্কুল বন্ধ রাখার পথে হাঁটছে রাজ্য প্রশাসন। চতুর্থ স্তরের রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যানের অধীনে এই সিদ্ধান্তগুলি কার্যকর করা হলেও, পুরো পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে আরও দীর্ঘ সময় লাগবে এমন আশঙ্কাও করছেন পরিবেশবাদীরা।

আগামী প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে আরও বসবাস যোগ্য করে গড়ে তোলার দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে বর্তমান প্রজন্ম- তা হারে হারে টের পাচ্ছেন দিল্লিবাসী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে- তা দূর করতে হলে পরিবেশের দিকে নজর দিতে হবে সবার আগে। দূষণ বন্ধে নিতে হবে শক্ত পদক্ষেপ।

এসএস