কুকি বিদ্রোহী ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্বে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে উত্তপ্ত ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মনিপুর। অগ্নিসংযোগ, অপহরণ ও হত্যাযজ্ঞের শিকার হচ্ছেন মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষেরা। কারফিউ জারি করেও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না পরিস্থিতি। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গেও গোলাগুলিতে লিপ্ত হচ্ছে কুকি বিদ্রোহীরা। থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে পুরো রাজ্যে।
জিরিবাম, পশ্চিম ইম্ফল, বিষ্ণুপুরসহ একাধিক জেলায় সংঘর্ষ উত্তেজনা এখন চরমে। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় আসাম-মণিপুর সীমান্ত থেকে এক নারী ও দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধারের পর উত্তেজনার পারদ আরও বেড়েছে।
মেইতেই সম্প্রদায়ের অভিযোগ, গত সোমবার (১১ নভেম্বর) জিরিবাম থেকে একই পরিবারের তিন নারী ও তিন শিশুকে অপহরণ করেছে কুকি বিদ্রোহীরা। উদ্ধার হওয়া মৃতদেহ তাদের মধ্য থেকে তিন জনের।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জিরিবামে কুকি ও মেইতেই গোষ্ঠীর মধ্যে ফের বড় ধরনের সংঘর্ষ বাধার আশঙ্কা করছে প্রশাসন। এর আগে গত জুন মাসে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধার পরে মেইতেই সম্প্রদায়ের লোকজনকে বোরোবেকরা পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় আশ্রয় শিবিরে রাখা হয়েছিল। সেখানেও হামলা চালিয়েছিল কুকি বিদ্রোহীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাল্টা অভিযান চালায় পুলিশও। এতে ওইদিন ১০ বিদ্রোহী নিহত হয়।
এবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্যের ছয়টি থানায় নতুন করে সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন আফস্পা চালুর নির্দেশ দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এর মধ্যে ইম্ফল ও জিরিবাম থানাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ আওতায় মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে সশস্ত্র সেনারা।
মেইতেই অধ্যুষিত রাজ্যটির পার্বত্য অঞ্চলে আধিপত্য কুকিদের। চাকরি ও শিক্ষায় কুকিদের জন্য নির্ধারিত কোটা ব্যবস্থা আর বিশেষ অর্থনৈতিক সুবিধার আওতায় মেইতেই সম্প্রদায়কেও আনা যায় কিনা, তা ভেবে দেখতে রাজ্য সরকারকে আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষিপ্ত কুকিরা। এরপর ২০২৩ সালের মে মাস থেকে চলমান সংঘাতে মণিপুরে আড়াই শতাধিক মানুষের প্রাণ গেছে। জ্বালাও পোড়াও এর ঘটনা বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার বাসিন্দা।