থানায় কুকি বিদ্রোহীদের হামলা আর তারপর নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে ১০ বিদ্রোহী নিহতের ঘটনায় বুধবারও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মনিপুরে। নিহত বিদ্রোহীদের ‘গ্রাম স্বেচ্ছাসেবক’ আখ্যা দিয়ে তাদের পক্ষে কুকিদের ১৩টি সংগঠনের ডাকে রাজ্যজুড়ে চলছে শাটডাউন।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায় আর কুকি আদিবাসীদের সংঘাতে বিভক্তি দেখা দিয়েছে পুরো রাজ্যে। সোমবার (১১ নভেম্বর) মনিপুরের জিবরাম জেলায় থানায় দু'দিক থেকে একযোগে হামলা চালায় কুকি বিদ্রোহীরা। এরপর ৪০০ মিটার দূরের একটি এলাকায় মেইতেইদের বাড়িঘরেও আগুন দেয়। গেলো এক সপ্তাহে অন্তত দুই মেইতেই নারীকেও হত্যা করে কুকিরা।
স্থানীয় একজন বলেন, ‘তারা এলো আর সব ধ্বংস করে দিয়ে চলে গেলো। অনেকগুলো বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এখানেই ১২টা ঘর পুড়ে ছাই হয়ে আছে। ভাঙচুর যে কতো করেছে তার হিসাব নেই। গুলিতে সবকিছু ফুটো হয়ে আছে। ড্রোন থেকে বোমাও ফেলেছে।’
নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা অভিযানের পর মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) ঘটনাস্থলে সন্ধান মেলে কুকি বিদ্রোহীদের মরদেহ। পরে বেসামরিক মানুষের পোড়া মরদেহও উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা হয়েছে রকেট প্রপেল্ড গ্রেনেড, একে সিরিজের অ্যাসল্ট রাইফেলসহ বেশ কিছু অস্ত্র।
ভারতের মনিপুরের পুলিশের মহাপরিদর্শক ইম্যানুয়েল মুইভাহ বলেন, ‘প্রায় ৪৫ মিনিটের বন্দুকযুদ্ধের পর বুঝতে পেরেছি হতাহতের সংখ্যা অনেক। ১০ জন বিদ্রোহীর মরদেহ পেয়েছি। এছাড়া দুই বৃদ্ধকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তিন নারী আর তিন শিশু এখনও নিখোঁজ।’
এক বছরের বেশি সময় ধরে অস্থির ৩২ লাখ বাসিন্দার রাজ্য মনিপুর। মেইতেই অধ্যুষিত রাজ্যটির পার্বত্য অঞ্চলে আধিপত্য কুকিদের।
রাজ্যের সরকারি চাকরি ও শিক্ষায় সংখ্যালঘু কুকিদের জন্য নির্ধারিত কোটা ব্যবস্থা আর বিশেষ অর্থনৈতিক সুবিধার আওতায় মেইতেই সম্প্রদায়কেও আনা যায় কিনা, তা ভেবে দেখতে রাজ্য সরকারকে আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে ক্ষিপ্ত কুকিরা। ২০২৩ সালের মে মাস থেকে সংঘাতে রাজ্যটিতে প্রাণ গেছে কমপক্ষে আড়াইশ' মানুষের, বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার বাসিন্দা।