এশিয়া
বিদেশে এখন
0

এবার যুদ্ধের হাতছানি তাইওয়ান প্রণালীতে

ইউক্রেন-রাশিয়া আর মধ্যপ্রাচ্যের পর এবার যুদ্ধের হাতছানি তাইওয়ান প্রণালীতে। এরইমধ্যে তাইওয়ানকে ঘিরে নতুন যুদ্ধের খেলায় নেমে গেছে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ পরাশক্তি চীন। তাইওয়ানের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব প্রান্তে হঠাৎই একযোগে শুরু করেছে নয়টি সামরিক মহড়া। তাইওয়ানের স্বাধীনতাকামী শক্তিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং।

শেষবার ২০২২ সালে তৎকালীন মার্কিন কংগ্রেস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফর করলে দ্বীপাঞ্চলটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল চীন। দু'বছর পর ফের তাইওয়ানের প্রতি যুদ্ধাংদেহী অবস্থানে চীন।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) তিন দিক থেকে তাইওয়ানকে ঘিরে নতুন করে মহড়া শুরু করেছে চীনের সশস্ত্র বাহিনী। 'জয়েন্ট সোর্ড ২০২৪বি' শীর্ষক এ যৌথ মহড়া চলছে তাইওয়ান প্রণালীতে। চীনা কমান্ডের প্রকাশিত মানচিত্রে দেখা গেছে, তাইওয়ানের পূর্ব উপকূলে দু'টি, পশ্চিম উপকূলে তিনটি, উত্তর উপকূলে একটি এবং চীনা উপকূলের পাশে তাইওয়ান নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি দ্বীপ ঘিরে তিনটিসহ একযোগে মোট নয়টি মহড়া চালাচ্ছে বেইজিং।

চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের উত্তেজনার পারদ যে নতুন মাত্রায় চড়তে শুরু করেছে সে বিষয়টি স্পষ্ট। তবে এখনও কোনো ধরনের গোলাগুলি বা বোমাবর্ষণের কথা জানায়নি বেইজিং। আকাশসীমায় বিমান চলাচলও নিষিদ্ধ করা হয়নি। জানানো হয়নি কবে শেষ হবে এ মহড়া, সে তথ্যও। 'তাইওয়ানের স্বাধীনতাকামী শক্তির বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের' বিরুদ্ধে একে কঠোর হুঁশিয়ারি আখ্যা দিয়েছে বেইজিং।

উত্তেজনার শুরু গেলো বৃহস্পতিবার তাইওয়ান ও চীনকে দুই রাষ্ট্র উল্লেখ করে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে'র বক্তব্যকে ঘিরে। বেইজিং ইউনিয়ন ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব তাইওয়ান স্টাডিজের লি ঝেংউয়াং বলেন, 'দু'পক্ষেরই সংবিধান আর তাইওয়ানের সংশ্লিষ্ট আইনকানুন এটাই প্রমাণ করে যে তাইওয়ান প্রণালীর দুই পাশই চীনা মালিকানাধীন। তাই প্রণালীর দুই পাশ একে অপরের অধীনস্ত নয় বলে যে নির্লজ্জ দাবি লাই চিং-তে করছেন, তাই অবৈধ। এতে শুধু যে চীনের আইন লঙ্ঘন হয় তাই নয়, অঞ্চলটির নিজস্ব আইনেরও পরিপন্থি এটি।'

সিংহুয়া ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব তাইওয়ান স্টাডিজের পরিচালক উ ইয়ংপিং বলেন, '১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার সময় তৎকালীন চীনা প্রজাতন্ত্র বিলুপ্ত করে দেয়া হয়। ফলে পুরো চীনের প্রতিনিধিত্বকারী বৈধ সরকার একটাই। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের নীতি ২৭৫৮-এও চীনের আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিত্ব বিষয়টির সমাধান করা হয়। গুয়াংদং ও ফুজিয়ানের মতো 'তাইওয়ান'ও স্রেফ গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ভেতরের একটি অঞ্চল।'

গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত ও স্বায়ত্তশাসিত তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ পরাশক্তি চীন। প্রয়োজনে সামরিক শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনারও দাবি করে। এ লক্ষ্যে প্রায় প্রতিদিন তাইওয়ানের আকাশ ও জলসীমায় যুদ্ধবিমান আর রণতরী পাঠায় বেইজিং। প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র আর ডুবোজাহাজ আমদানির মাধ্যমে প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়াচ্ছে তাইপে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই জাতীয় দিবসের ভাষণে বেইজিংয়ের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্কের প্রস্তাব দিলেও তাইওয়ানের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার চীনের নেই বলে মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বেইজিং। জানায়, আগুন নিয়ে খেলছে তাইওয়ান।

চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অব তাইওয়ান স্টাডিজের উপ-পরিচালক পেং ওয়েইজু বলেন, ''সদিচ্ছা', 'শান্তি', 'তাইওয়ান প্রণালীর স্থিতিশীলতা রক্ষা'র মতো যতো শব্দই লাই চিং-তে ব্যবহার করুন না কেন; অবস্থান, শাসনব্যবস্থার ভিত্তি, পদক্ষেপ, নীতিমালা ইত্যাদির দিক থেকে যতো তিনি 'তাইওয়ানের স্বাধীনতা'র প্রশ্নে অনড় থাকবেন, নিকট ভবিষ্যতে ততোই তাইওয়ান প্রণালীতে উত্তেজনা বাড়তে থাকবে।'

চীনা কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব পিসফুল ন্যাশনাল রিইউনিফিকেশনের স্টাডিজ কমিটির উপ-পরিচালক ঝেং জিয়ান বলেন, 'এই পুরো সময়ে তার ব্যবহৃত শব্দ আর তার কাজকর্মের ভিত্তিতে বিচার করলে এটাই বোঝা যায় যে তিনি 'তাইওয়ানের কট্টর স্বাধীনতাকামী'। আগুন নিয়ে খেলে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী করে তুলছেন তিনি।'

এদিকে, চীনের মহড়া শুরুর পরই স্থল, জল ও আকাশপথে সশস্ত্র বাহিনীর সতর্ক অবস্থানের ভিডিও প্রকাশ করেছে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও।

১৯৪৯ সালের গৃহযুদ্ধে চীনা ভূখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসন চালু করে তাইওয়ান। দেশটির বেশিরভাগ নাগরিক চীনবিরোধী এবং স্বাধীনতাপন্থি।

এসএস