'রামকে যিনি এনেছেন, আমরা তাকে ক্ষমতায় আনবো'। লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশে বিজেপির মূল স্লোগান ছিলো এটি। বছরের শুরুতে অযোদ্ধার রামমন্দির উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গেরুয়া শিবিরের আশা ছিলো ৫০০ বছর পর যে দল রামমন্দির নির্মাণ করেছে, উত্তর প্রদেশের ধর্মপ্রাণ সনাতনীরা, সে দলকেই জয়ী করবে।
তবে বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। উত্তর প্রদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে বিজেপি, হেরেছে অযোদ্ধার ফাইজাবাদ আসনেও। এতকিছুর পরও রাজ্যটিতে কেন ভোটারদের মন জয় করতে পারলো না গেরুয়ারা, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
রামমন্দির ভক্তদের যাতায়াতে ২০ মিটার প্রশস্ত ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রামপথ নির্মাণ করে রাজ্য সরকার। দীর্ঘ এই রাস্তা তৈরি করতে ভেঙে ফেলা হয় অসংখ্য বাড়িঘর। ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো অনেক বাসিন্দারই ঠিকানা রাস্তায়। পুলিশের দমনপীড়নের পাশাপাশি ভুক্তভোগীদের জন্য নির্ধারিত জমি দখলে নেন স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ী।
তারা বলেন, মন্দির নির্মাণের মাধ্যমে রাজ্যের বাইরের মানুষের চাকরি হচ্ছে। তারা সুবিধা পাচ্ছে। এদিকে আমাদের লোকজনের ঘর ভেঙ্গে গৃহহীনে পরিণত করা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের প্রতি ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েছে ইন্ডিয়া জোটের শরিক সমাজবাদী দল। তৎকালীন সংসদ সদস্য লাল্লু সিংয়ের সংবিধান সংশোধনের বক্তব্যকে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করেন অখিলেশ যাদবের দল। ক্ষমতায় আসলে দলিতদের অধিকার কেড়ে নিবে বিজেপি, ভোটারদের কাছে এমন প্রচারণা করেন সমাজবাদী দলের নেতারা। অন্যদিকে রাজ্যের মুখমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পছন্দের প্রার্থীদের বদলে টাকার বিনিময়ে প্রার্থী দেয়ার অভিযোগ করেন বিজেপির অনেক কর্মী। তাই দলিত ও মুসলিমদের পাশাপাশি বেশিরভাগ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রায় ছিলো সমাজবাদী দলের পক্ষে।
ফাইজাবাদের নবনির্বাচিত সাংসদ আওয়াদেশ প্রসাদ বলেন,'সরকার গঠনের জন্য বিজেপির ২৭২ আসন প্রয়োজন ছিলো। সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রয়োজন ছিলো ৪০০ আসন। এ বিষয়ে ভোটাররা রাগান্বিত ছিলেন। বিশেষ করে সংবিধান প্রণেতা আম্বেদকারের ভক্তরা। তাই যারা সংবিধান সংশোধন করতে চান, তাদের জন্য এই স্লোগানই হিতে বিপরীত হয়েছে।'
তবে উত্তর প্রদেশ থেকে হিন্দুত্ববাদের মাধ্যমে নির্বাচনে জয় পাওয়া যাবে না, এ বিষয়টি মানতে নারাজ খোদ ভোটাররাই। সমাজবাদী দলের পক্ষে রায় দেয়া অনেক ভোটার জানান, রাজ্যটিতে বিজেপিতে যতটুকু ভোট পেয়েছে, তা শুধুমাত্র রামমন্দির নির্মাণের জন্যেই।
তারা বলেন, নরেন্দ্র মোদি আর যোগী আদিত্যনাথ যত ভোট পেয়েছেন, তা শুধুমাত্র রামমন্দিরের কারণেই। অন্যথায় তারা কোনো ভোটই পেতেন না।
১৮ তম লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পেয়েছে মাত্র ৩৬টি আসনে। ফাইজাবাদ আসনের মতো রাজ্যটিতে হেরেছেন স্মৃতি ইরানি, মেনোকা গান্ধীর মতো গেরুয়া শিবিরের হেভিওয়েট প্রার্থীরা।