গৃহযুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে জান্তা সরকার

এশিয়া
বিদেশে এখন
0

গৃহযুদ্ধে জয় পেতে এবার রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। রোহিঙ্গাদের দিয়ে রাখাইন অধ্যুষিত বুথিডাং শহর পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ মিলেছে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে জাতিগত বিদ্বেষ উসকে দেয়ার মাধ্যমে যুদ্ধ জয়ের কৌশল নিয়েছে জান্তা সরকার, এমনটাই দাবি বিশ্লেষকদের।

রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের তিনবছরের মধ্যেই বিদ্রোহীদের সামনে কোনঠাসা হচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। দেশটির সেনারা প্রতিনিয়তই দখল হারাচ্ছে একের পর এক শহরের। বাংলাদেশ, ভারত ও চীনের পর সংঘাত চলছে থাইল্যান্ড সীমান্তেও। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থান ফিরে পেতে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

সেনা সংকটের জেরে চলতি বছর দেশটিতে জারি করা হয় সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক কাজের আইন। রোহিঙ্গা পুরুষদের নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র, এক বস্তা চাল ও মাসিক ১ লাখ ১৫ হাজার কিয়াট বেতনের অঙ্গীকার করা হয়েছে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। তবে সাড়া না পাওয়ায় রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক তুলে নিয়ে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে সেনাবাহিনীতে। তাদেরকেই আবার বাধ্য করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শহর বুথিডাং পুড়িয়ে ফেলতে।

মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর তথ্য বলছে, ইতোমধ্যেই ছাই হয়ে গেছে শহরটির ১ হাজারের বেশি স্থাপনা, যার মধ্যে রয়েছে দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বডার্সের কার্যালয় ও ওষুধের গুদাম। ইরাবতীকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এক রোহিঙ্গা অধিকার কর্মী জানান, জান্তা সরকার জাতিগত সংঘাত ছড়ানোর চেষ্টা করছে। যাতে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের।

দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে জানা যায়, শহর পুড়িয়ে ফেলতে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছে দুটি সশস্ত্র সংগঠন- আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি- আরসা ও আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি। তবে রোহিঙ্গা অধিকারকর্মীদের দাবি, সংগঠন দুটির সঙ্গে তাদের সম্প্রদায়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এমনকি জান্তা সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্কও গোপন ও সন্দেহজনক।

গেল মার্চে বুথিডাং, মংডু ও সিতওয়েতে প্রধান বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে কয়েকশ' রোহিঙ্গা। জান্তা মদদপুষ্ট সংবাদমাধ্যম, টেলিগ্রাম চ্যানেল ও ফেসবুক পোস্টে এই খবর খুবই গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়। তবে পরবর্তীতে প্রমাণ মেলে সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ না দেয়ার বিনিময়ে বিক্ষোভে পাঠানো হয় রোহিঙ্গাদের। তবে ঘটনা অস্বীকার করে জান্তা সরকারের মুখপাত্র জানান, সামরিক বাহিনীর প্রতি জনসাধারণের সম্মানকে দুর্বল করার জন্য এমন অভিযোগ আনা হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের অবৈধ অভিবাসীর চোখে দেখে রাখাইনরা। পূর্বে রোহিঙ্গাদের ওপর অনেকবারই দমনপীড়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে রাখাইনদের বিরুদ্ধে। তবে গেল ৬ বছরে দু'পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়। জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা পল গ্রিনিংয়ের মতে, জাতিগত বিভেদই পারে জান্তা সরকারকে টিকিয়ে রাখতে। তাই রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করছে সেনাবাহিনী।

এসএসএস