এখনও সেনা শাসনে চলছে বিশ্বের যেসব দেশ

সেনাশাসনের একটি চিত্র
সেনাশাসনের একটি চিত্র | ছবি: সংগৃহীত
0

গণতন্ত্র এবং রাজতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সেনা শাসন প্রতিষ্ঠা চেষ্টার ঘটনা নতুন নয়। গেল বছরই দেশে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন-সুক ইওল। তার সে চেষ্টা ব্যর্থ হলেও, ইউক্রেন থেকে মিয়ানমার এবং মাদাগাস্কার পর্যন্ত এখনও চলে সেনা শাসন। যার ব্যাপক প্রভাব দেখা যায় বেসামরিক জনজীবনে। কোন কোন দেশের শাসনভার এখনও সেনাবাহিনীর হাতে ন্যস্ত?

গেল বছরের ৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইওন সুক ইওল। বিরোধী দল এবং সাধারণ জনগণের তীব্র প্রতিবাদের মুখে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে অজুহাত দিয়ে জারি করা মার্শাল-ল কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন তিনি।

নিজ দলের সদস্যদের সমালোচনার মুখেও পড়েন ইউন সুক ইওল। কয়েকদিনের মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্টের জারি করা সামরিক আইনকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। পরবর্তীতে অভিশংসন ভোটে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় তাকে।

বহুল আলোচিত সামরিক আইন এমন এক জরুরি শাসন ব্যবস্থা যেখানে দেশের সমস্ত বেসামরিক কার্যকলাপের ওপর সামরিক কর্তৃত্ব চলে। সাংবিধানিক অধিকার স্থগিত, কারফিউ এবং চলাচলে বিধিনিষেধ, বেসামরিক নাগরিকদের জন্য সামরিক বিচার, আটক ক্ষমতা, মিডিয়া ও সমাবেশে বিধিনিষেধসহ বিভিন্ন বিষয় সামরিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নির্ধারণ হয়।

প্রতিবাদের মুখে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন প্রত্যাহার হলেও বিশ্বের বেশকিছু দেশে এখনও বহাল এই আইন। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার আক্রমণের পর স্বঘোষিত সামরিক আইনের অধীনে চলছে ইউক্রেন।

দেশটির এমন পরিস্থিতিকে জরুরি অবস্থা অ্যাখ্যা দিয়েছেন এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশন অফ কানাডার গবেষণা ও কৌশল বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিনা নাদজিবুল্লা। যেখানে সরকার বিশেষ ক্ষমতা সক্রিয় করে কারফিউ, সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা, বা বর্ধিত পুলিশিং এবং বিচার বিভাগ সহ বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব সামরিক বাহিনীর হাতে দেয়।

আরও পড়ুন:

এসব বিধিনিষেধের বেশিরভাগই ইউক্রেনীয়রা গ্রহণ করলেও সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সরকার দুর্নীতির ক্রমবর্ধমান অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ায় দেশের রাজনৈতিক জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সাধারণ জনগণের মনে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। সামরিক সরকার তখন থেকেই কয়েক ডজন শহরে সামরিক আইন জারি করেছে, বিশেষ করে ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ প্রধান শহরগুলিতে, কমান্ডারদের সামরিক আদালতে বেসামরিক নাগরিকদের আটক, বিচার এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে।যা দেশের কিছু অংশকে পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

সামরিক আইন বলবত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং গণগ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে। প্রায় চার বছর পর গেল জুলাইয়ের শেষের দিকে, দেশের কিছু অংশ থেকে জরুরি অবস্থা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয় সামরিক জান্তা সরকার। আগামী ২৮ ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা করে।

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আরেক দেশ থাইল্যান্ডে পুরোপুরি সামরিক শাসনের অধীনে না থাকলেও পাত্তানি, ইয়ালা এবং নারাথিওয়াত সহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশগুলির কিছু এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে জরুরি অবস্থা এবং নিরাপত্তা আইন জারি রয়েছে। যা সামরিক আইনের মতোই সেনাবাহিনীকে বাড়তি ক্ষমতা দেয়। সম্প্রতি কম্বোডিয়ার সাথে সংঘর্ষের পর থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী জেলা চান্থাবুরি, ত্রাত এবং সা কাও প্রদেশেও সামরিক আইন ঘোষণা করেছে।

এছাড়া বুরকিনা ফাসাও, গিনি, গিনি-বিসাউ, মাদাগাস্কারে সামরিক শাসন জারি রয়েছে। সাধারণত যুদ্ধ, গণঅস্থিরতা, সশস্ত্র বিদ্রোহ বা জাতীয় স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা দেখা দিলেই কোনো দেশের সরকার সামরিক আইন জারি করে। তবে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে,প্রায়শই ভিন্নমত দমন, ক্ষমতা সুসংহত করতে বা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোকে উপেক্ষা করতেই মার্শাল-ল জারি করা হয়।

এসএইচ