একসময় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ ছিল মিয়ানমার। মধ্যবিত্তরা এখানে ছিল উদীয়মান। সেই মিয়ানমার এখন মোকাবিলা করছে ভয়াবহ দারিদ্র্যতা। যুদ্ধের কারণে প্রতিদিনই নিঃস্ব হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ।
সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, দেশটির ৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে অর্ধেকই দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। এরমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষের মাথা পিছু আয় ১ ডলারেরও কম। জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প ইউএনডিপি বলছে, ২০১৭ সালের তুলনায় দারিদ্র্যের পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণ।
তিন বছর ধরে মিয়ানমারে সেনা শাসন চলায় দেশের অর্থনীতি দিনদিন নিম্নমুখী হচ্ছে। মধ্যবিত্তদের যেখানে জীবনযাত্রার ব্যয় বহন করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে মৌলিক প্রয়োজনের বিভিন্ন খরচের খাতে কাটছাঁট চলছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরের প্রতিবেদন বলছে, আরও ২৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
সংঘাতের কারণে দেশটিতে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অনেকে, অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, অনেকে খুঁইয়েছেন ব্যবসা। এর আগে দারিদ্র্য বিমোচনে মিয়ানমারের অগ্রগতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। ২০১১ সালে সেনাশাসন থেকে গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে দেশ পরিচালনার ভার যাওয়ার পর রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক বিভিন্ন পুনর্গঠন হয় দেশটিতে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মূল্যায়ন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে এই অঞ্চলের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর একটি ছিলো মিয়ানমার। বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে দেশটির অর্থনীতি ৬ শতাংশ সম্প্রসারিত হয়েছে। ২০০৫ সালে দারিদ্র্যের হার ছিলো প্রায় ৫০ শতাংশ, ২০১৭ তে নেমেছে প্রায় ২৫ শতাংশে।
কিন্তু ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর উল্টোদিকে যাচ্ছে দেশটির অর্থনীতি। দারিদ্র্য শুধু দ্বিগুণ হয়নি, অনেক বেশি দরিদ্র হয়ে গেছে সাধারণ মানুষ। ইউএনডিপি বলছে, দেশটির অধিকাংশ মানুষ এখন দরিদ্র। মধ্যবিত্ত শ্রেণি উধাও হয়ে যাচ্ছে। আড়াই বছরে মধ্যবিত্তদের ৫০ শতাংশ দরিদ্র হয়ে যাওয়া একটা দেশের জন্য চরম আশঙ্কার।
সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোর অবস্থা আরও করুণ। সামরিক অভ্যুত্থানের পর জান্তা বিরোধী আর জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীরা একজোট হয়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের ওপর নেমে আসে আরও ভয়াবহ হামলা। ৩০ লাখ মানুষ হয়ে যায় বাস্তুচ্যুত। এরমধ্যে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কায়াহ রাজ্যে সংঘাত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি, কমে গেছে সেখানকার মানুষের আয়।
মিয়ানমারের স্থানীয় মুদ্রা কিয়াটের মান কমেছে অনেক, উল্টোদিকে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ও বৈদেশিক বাণিজ্য। বেকারত্ব আর অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা রেকর্ড বেড়েছে। ২০২১ সালে ১৮ শতাংশ কমার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাড়েনি দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি। ইউএনডিপি বলছে, জরুরি সহায়তা ছাড়া অর্থনীতিতে দুর্বলতা বাড়তেই থাকবে, ভোগান্তি পোহাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।