এশিয়া
বিদেশে এখন
0

'পাকিস্তানে নির্বাচনে সেনাবাহিনীর প্রভাব বিফলে'

পাকিস্তানের নির্বাচনে এবার কি তাহলে প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী? তাদের প্রভাবিত দলের প্রার্থীরা শীর্ষস্থান না পাওয়াই কি জনসমর্থন কমার ইঙ্গিত? এমন বিশ্লেষণ উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে।

'সেনাবাহিনী কখনও যুদ্ধে জেতেনি এবং নির্বাচনে হারেনি' পাকিস্তানে এটি প্রায় প্রবাদবাক্যে রূপ নিয়েছে। তবে এবার কৌশলগত ভোটের মাঠে সেই প্রবাদের একটি অংশ আবারও ভুল প্রমাণিত হল। সাত দশকের ইতিহাসে সামরিক শাসন অথবা সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে ছিল পাকিস্তান। অভিযোগ আছে, ২০১৮ সালে তুমুল জনপ্রিয় ক্রিকেটার ইমরান খান সেনাবাহিনীর সমর্থনেই প্রধানমন্ত্রী হন। পরে তাদের বিরাগভাজন হয়েই ক্ষমতা হারাতে হয় ইমরানের।

ফাঁকা মাঠে গোল দিতে হাজির করা হয় প্রত্যাবর্তনের রাজা খ্যাত নওয়াজ শরিফকে। ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে লন্ডনের নির্বাসিত জীবন থেকে ফিরিয়ে আনা হয় তাকে। এ সুযোগে নির্বাচনে আজীবন নিষেধাজ্ঞার আদেশও তুলে নিতে সফল হন নওয়াজ। তবে এবার তার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয় পাকিস্তানিরা। নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সাজানো গোছানো স্ক্রিপ্ট এলোমেলো করে দেয় ইমরান সমর্থকরা।

ইমরানকে ক্ষমতা থেকে নামানোর পর একের পর এক মামলা দিয়ে করা হয় কারাবন্দি। এমনকি নির্বাচনে তাকে ও তার দলকে অযোগ্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কেড়ে নেয়া হয় নির্বাচনী প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট। ইমরানকে আড়ালে রাখার সবরকম চেষ্টা করেও বিফলে গেছে নওয়াজের প্রচেষ্টা।

জেলে বসেই ইমরান নির্বাচনে লড়ে গেছেন শেষ পর্যন্ত। দলের সমর্থিত স্বতন্ত্ররাই সবার চেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন। বলা হয় সেনাবাহিনীর পরোক্ষ সমর্থনেও ইমরানকে হারাতে পারেননি নওয়াজ শরীফ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানে ভোটের মাঠে কার্যত সেনাবাহিনী হেরেছে। এখন ইমরানকে বাদ দিয়ে জোর করে জোট সরকার গঠন করলে তা হবে দুর্বল। কারণ জনসমর্থনের বড় একটি অংশকে উপেক্ষা করা হবে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বতন্ত্রদের কাছে বড় পরাজয় হয়েছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ নেতা নওয়াজের। তবে তা আসলে সেনাবাহিনীর পরাজয়। ভোটের রাজনীতিতে সেনাবাহিনী সত্যিই তার প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল পায়নি। এ অবস্থায় পাকিস্তানের রাজনীতি সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছে।

এদিকে দলাদলি ও নৈরাজ্য বাদ দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান পাকিস্তানের সেনাপ্রধান অসীম মুনির। অরাজকতা ও মেরুকরণের রাজনীতি ভুলে শক্ত হাতে পাকিস্তানের হাল ধরতে বলেন তিনি। রাজনীতিবিদদের মতে, সেনাবাহিনী যে দিকেই যাবে সেখানেই তারা জনসমর্থন হারাবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রার্থীদের সমর্থন দিতে গেলে ইমরানের সঙ্গে তাদের বিরোধ মেটাতে হবে।

সেনাবাহিনীর স্থাপনায় হামলার ঘটনায় করা এক মামলায় গত শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ইমরান খানকে জামিন দেয়া হয়। এটিকে ইমরানের প্রতি সেনাদের নমনীয়তা হিসেবে দেখছেন পিটিআই নেতারা। অতীত ভুলে দেশের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত বলে জানান ইমরান খান।

দেশটির ইতিহাসে ১৯৮৮ সালে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিরোধিতা মুখে নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন বেনজির ভুট্টো। পরে মার্কিন চাপে বেনজিরকে দিয়ে সরকার গঠনে বাধ্য হয় সেনাবাহিনী। তবে পররাষ্ট্রনীতি ও পারমাণবিক অস্ত্রনীতিতে কথা বলার এখতিয়ার কেড়ে নেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি বেনজির ভুট্টো। ১৯৯০ সালে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে তার সরকারকে উৎখাত করা হয়।

এসএস