নিজে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও সুকৌশলে দলীয় নেতাদের হয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন এই নেতা। জনগণের কাছাকাছি পৌঁছাতে সাহায্য নিয়েছেন আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেয়া প্রায় ২০০ পিটিআই নেতার হয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তির সাহায্যে জেলে বসেই প্রচারণা চালিয়ে প্রতিপক্ষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
প্রায় ২৪ কোটি জনসংখ্যার পাকিস্তানে ৪০ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর বলে পছন্দের দল চেনেন প্রতীক দেখেই। সেখানে ব্যালটে সুপরিচিত ক্রিকেট ব্যাট নেই। তাহলে কী দেখে ইমরানের দলের নেতাদের চিনে ভোট দিলেন পাকিস্তানি জনতা? ইমরানের ছবিযুক্ত লিফলেট নিয়ে নির্বাচনের আগে ঘরে ঘরে গিয়ে তার বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন দলের মাঠকর্মীরা।
প্রিয় নেতার হয়ে কাজের জন্য বীমা সংস্থার চাকরি সাময়িকভাবে ছেড়ে দিয়ে মাঠে ছিলেন ২৫ বছর বয়সী এক তরুণী। তিনি বলেন, 'আমরা নারীরা প্রচারণায় নেমেছি। কারণ, পুলিশ আমাদের সহজে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। দরজায় দরজায় যাওয়া নারীদের জন্য সহজও। তারওপর কাজের সময় প্রতিপক্ষ বা পুলিশের ঝুঁকি বুঝলে অচেনা বাড়িতে আশ্রয় নেয়াও সহজ।'
দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতাচ্যুত ও কারাবন্দি হয়ে ইমরান নিজে তো নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি, সাথে তার দল পাকিস্তান পিটিআইয়ের শীর্ষ কয়েক হাজার নেতা আর সদস্যও জেলে। নির্বাচনের ব্যালটেও ছিল না দলীয় প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে কারাবন্দি দল প্রধানের কণ্ঠ ব্যবহার করে তাকে জনতার সামনে আনার কাজটি করে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো থেকে পিটিআইয়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শাখা।
পিটিআই'র সোশ্যাল মিডিয়া প্রধান জিবরান ইলিয়াস বলেন, 'সংবাদপত্র হোক বা টিভি চ্যানেল, মূলধারার সংবাদমাধ্যম কতটা পক্ষপাতদুষ্ট, তা সবাই বুঝে গেছে। তাই সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য বিকল্প মাধ্যম খুঁজছে তারা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝুঁকছেন।'
জেল থেকে ইমরানের পাঠানো চিঠিকে তার কণ্ঠে রূপ দেয়া হয়েছে বিজয় ভাষণেও, যেখানে প্রতিপক্ষকে রীতিমতো ধুয়ে দিয়েছেন পিটিআই প্রধান।
৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের দেড় মাস আগে ১৭ ডিসেম্বর, স্ট্রিমইয়ার্ড নামের একটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পাকিস্তানের প্রথম ভার্চ্যুয়াল নির্বাচনী সমাবেশের সফল আয়োজন করে পিটিআই। ৫০ লাখের বেশি মানুষ যোগ দেয় ওই সমাবেশে।
নির্বাচনী প্রচারণার অভিনব এ পদ্ধতি যে কাজে দিয়েছে বেশ, তা ফলেই স্পষ্ট। ২৬৬ টি আসনের মধ্যে ৯১ টি আসন পেয়ে এগিয়ে আছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানো পিটিআই নেতারা। বিপরীতে জোট বাঁধতে চাইলেও নওয়াজ আর বিলাওয়ালের দুই দল মিলেও পায়নি সরকার গঠনের জন্য ন্যূনতম ১৩৪টি আসন।