এশিয়া
বিদেশে এখন
0

পাকিস্তানের নির্বাচনে সেনাবাহিনীর পছন্দের প্রার্থী নওয়াজ

নওয়াজ-বিলাওয়াল জোট সরকার হতে পারে

বেশিরভাগ দেশের সেনাবাহিনী আছে। কিন্তু পাকিস্তানে, দেশটি সেনাবাহিনীর। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর ওয়াশিংটন পোস্টের এক সম্পাদকীয়র শিরোনাম ছিল এটি। দশকের পর দশক পাকিস্তানের সেনাপ্রধানরা নিয়মিত বিরতিতে শুধু অভ্যুত্থানই ঘটাননি, দেশের অর্থ আর পররাষ্ট্র নীতিতেও অবিশ্বাস্য রকমের হস্তক্ষেপকে স্বাভাবিক করে তুলেছে। এবারের নির্বাচনেও সেনাবাহিনীর ছায়া এড়াতে পারছে না বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

সামরিক শাসন আর একনায়কতন্ত্রের দীর্ঘ ইতিহাস লালন করা পাকিস্তান পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে আজ পর্যন্ত কোন প্রধানমন্ত্রী পুরো মেয়াদ টিকতে পারেননি। এখনও দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ইমরান খান গেল বছর ক্ষমতাচ্যুত হয়ে বর্তমানে কারাবন্দি এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ায় নিষেধাজ্ঞা আছে। এমন পরিস্থিতিতে এ নির্বাচন কিছুতেই অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার উপায় নেই, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

পাকিস্তানের রিসার্চ সেলের রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাবির শাহ বলেন, প্রায় ১৩ কোটি ভোটারকে ভোটের অধিকার প্রয়োগের জন্য একটি একপাক্ষিক নির্বাচনে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের অনুকূলেই পুরো পরিস্থিতি।

ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) কয়েক হাজার সদস্য এখনও জেলে আছেন। বেঁচে যাওয়া দলের ২০০ সদস্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। কারণ নির্বাচনের ব্যালটেও নেই তার দলের প্রতীক- ক্রিকেট ব্যাট। অথচ প্রায় ২৪ কোটি জনসংখ্যার পাকিস্তানে ৪০ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর বলে পছন্দের দল তারা চেনেন প্রতীক দেখেই।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

অভিযোগ উঠেছে, ১৯৯০ এর দশক থেকে পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা নওয়াজ শরীফ এবারের নির্বাচনে সেনাবাহিনীর পছন্দের প্রার্থী।

উড্রো উইলসন্স সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মিখাইল কুগেলম্যান বলেন, নির্বাচনের আগের কয়েক মাস বা সপ্তাহে পাকিস্তান বেশ ঘটনাবহুল হয়ে ওঠে। এমনটা বেশ কয়েকবার আমরা দেখেছি। বিশেষ করে, সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্ক স্বস্তির না হওয়ায় দলকে নির্বাচনের আগে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই নির্বাচনের দিন যাই হোক না কেন, দেশের অন্যতম বড় দলকে সরিয়ে দেয়ার মানে ভয়াবহ কারচুপি হবে ভোটে।

অনেক বছর ধরে সেনাবাহিনীর পথের কাঁটা হয়ে থাকা নওয়াজও এবার ক্ষমতায় আসার জন্য সেনাবাহিনীর ওপরই নির্ভর করছেন। তবে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নিজের নাম জড়িয়ে বেশ কয়েক বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকার পর দেশে ফিরে কতোটা সমর্থন পাবেন তিনি, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

ধারণা করা হচ্ছে, বিগত নির্বাচনে তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ৩৫ বছর বয়সী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির সঙ্গে জোট বাঁধতে হতে পারে ৭৪ বছর বয়সী নওয়াজকে।

সাবির শাহ আরও বলেন, পাকিস্তান এবার ঝুলন্ত পার্লামেন্টের দিকেই এগোচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সেনাবাহিনীর সমর্থন হারানোর পর সবকিছুর মিশেলে এক অদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আর পাকিস্তানে সব কলকাঠি সেনাবাহিনীরই হাতে। ১৯৭০ সাল থেকে গেল ১১টি নির্বাচনের মধ্যে ১০টিতেই সেনাবাহিনীর কারচুপির অভিযোগ রয়েছে।

ভারত, ইরানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করতে চাইবেন নওয়াজ-বিলাওয়াল, এমন ধারণার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বেশ সমর্থন পাচ্ছেন এই দুই নেতা।