তিব্বত মালভূমির পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত ইয়ারলুং জাংপো নদীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ বাঁধটি নির্মাণের খবরে ছেয়ে গেছে চীনা গণমাধ্যম। যদিও প্রকল্পটির কারণে তিব্বতের ঐ এলাকার কী পরিমাণ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে কিংবা স্থানীয়দের ওপর এর প্রভাব কেমন হবে এ নিয়ে কোনো ইঙ্গিত দেয়নি বেইজিং। নদীতে বাঁধ নির্মাণ করলে গতিপথ বাধাগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও জলজ প্রাণীর বাস্তুসংস্থানের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।
যদিও ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি, চীনা কর্মকর্তাদের মতে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ফলে অঞ্চলটিতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর সেই অর্থে বড় কোনো প্রভাব পড়বে না। এনডিটিভি জানাচ্ছে, ইয়ারলুং জাংপোর যে অংশে বাঁধ নির্মাণ করা হবে সেখান থেকে বাঁক নিয়ে নদীটি ভারতের অরুণাচল প্রদেশে প্রবেশ করে।
এনডিটিভির প্রতিবেদন আরও বলছে, এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রজেক্টের কাজে হাত দেয়ার আগে এই বিষয়ে বেইজিং ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছে নয়াদিল্লি। যদিও নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়া হয়নি।
গলিত হিমবাহ ও পাহাড়ি ঝর্ণা থেকে ইয়ারলুং জাংপো নদীর উৎপত্তি। ভারতের অরুণাচল ও আসাম রাজ্যের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নদীটি ব্রহ্মপুত্র নদ নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বিবিসি নিউজের দাবি, প্রকল্পটির কারণে নদীর নিম্নধারে পানির প্রবাহ ও পথ পরিবর্তনের আশঙ্কা আছে।
সিনহুয়া আরও জানায়, ১ ট্রিলিয়ন ইওয়ান বা ১৩৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় হবে এই প্রকল্পটিতে। কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না জানাচ্ছে, এটি বছরে ৩০ হাজার কোটি কিলোওয়াট-ঘণ্টা পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। যা চীনের চীনের মধ্যাঞ্চল অবস্থিত থ্রি জর্জেস বাঁধের উৎপাদন সক্ষমতার তিন গুণের বেশি। থ্রি জর্জেস বাঁধটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ বাঁধ হিসেবে খ্যাত হলেও ইয়ারলুং জাংপো জর্জেসকেও ছাড়িয়ে যাবে।
এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড আরও জানাচ্ছে, এই প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হলে নয়াদিল্লি-বেইজিং সম্পর্কে আরও অবনতির আশঙ্কা আছে। পানি নিয়ে শীতল যুদ্ধে জড়ানোর আশঙ্কা করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া বলছে, এই বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীর পানি ধরা ও ছেড়ে দেয়ার ক্ষমতা চীনের হাতে চলে যাবে। ফলে, হঠাৎ করে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিলে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ ভয়াবহ বন্যার কবলেও পড়তে পারে।