রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া শান্তি চুক্তি এখনো আলোচনাযোগ্য: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প | ছবি: সংগৃহীত
0

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ২৮ দফার শান্তি পরিকল্পনা দ্রুত মেনে নিতে জেলেনস্কিকে চাপ দেয়ার ২৪ ঘণ্টা না যেতেই প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত নয় বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ পরিকল্পনা রাশিয়াঘেঁষা দাবি করে কিয়েভের অন্যান্য পশ্চিমা মিত্রদের আপত্তি ও উদ্বেগের মাঝে ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া শান্তিচুক্তি এখনো আলোচনাযোগ্য। এ নিয়ে আজই যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জেনেভায় ইউক্রেন এবং ইউরোপের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ২৮ দফা প্রস্তাব দিয়ে এখন আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বেশিরভাগ প্রস্তাবই মস্কোর অনুকূলে থাকার দাবি তুলে শুরু থেকেই আপত্তি ও উদ্বেগ জানিয়ে আসছে কিয়েভের ইউরোপীয় মিত্ররা।

এরপরও ইউক্রেনকে ২৮ দফা প্রস্তাবের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানাতে ট্রাম্পের আল্টিমেটাম বিতর্কের ঝড় ওঠে। ট্রাম্পের প্রস্তাব পুতিন মেনে নিতেই তা আরও তীব্র হয়। প্রশ্ন ওঠে- নিজ দেশের স্বার্থের জলাঞ্জলি দিয়ে কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব টিকেয়ে রাখবে ইউক্রেন। এমন কঠিন মুহূর্তে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি না দেয়ারই বার্তা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি।

আরও পড়ুন:

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে- মানুষ, মানবতা, রাষ্ট্র এবং জনগণের বিরুদ্ধে করা অপরাধীদের পুরস্কৃত বা ক্ষমা করা যাবে না। নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচারের উপর ভিত্তি করে প্রকৃত শান্তি সর্বদা নিশ্চিত হয়। এই অনুভূতি কেবল আমার নয়। আমি মনে করি আমার দেশের লাখ লাখ মানুষ এবং বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ এটা অনুভব করে।’

এমন পরিস্থিতিতে শনিবার জি-টুয়েন্টি সম্মেলনের ফাঁকে ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছেন জি-সেভেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। যেখানে ইউক্রেনের জন্য দৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ সবাই। না হলে পুরো ইউরোপের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন তারা।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিক মের্জ বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্রধানদের ওপর চাপ দিয়ে যুদ্ধ শেষ করা সম্ভব নয়। এছাড়া ভবিষ্যতে ইউক্রেন ও ইউরোপের নিরাপত্তার উপর প্রভাব ফেলবে কি-না তা যাচাই করে যুদ্ধ শেষের পথে যেতে হবে। না হলে সমগ্র ইউরোপ মহাদেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয়রা সবাই শান্তি চায়। কিন্তু আমরা একটি শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি চাই। আমার মনে হয় এটা খুবই ভালো যে যুক্তরাষ্ট্র কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু একই সাথে ইউক্রেনীয় সার্বভৌমত্ব এবং ইউরোপীয় নিরাপত্তা দিকটাও মাথায় রাখতে হবে।’

এ অবস্থায় রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জেনেভায় ইউক্রেন ও ইউরোপের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘২৮ দফা পরিকল্পনায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। যা একটি ন্যায্য এবং স্থায়ী শান্তির জন্য অপরিহার্য। আমরা সবাই এটাই চাই। তবে পরিকল্পনাটিতে আরও কিছু বিষয় সংযোজন-বিয়োজন প্রয়োজন।’

ইউরোপীয় মিত্রদের এমন উদ্বেগ ও আপত্তির মুখে ২৮-দফা পরিকল্পনা চূড়ান্ত নয় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শান্তি প্রস্তাব না মেনে জেলেনস্কি নিজের মতো করে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাইলে কিছু করার নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘না এটি আমার চূড়ান্ত প্রস্তাব নয়। আমরা শান্তিতে পৌঁছাতে চাই। এটা হওয়া উচিত। অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। রাশিয়ার-ইউক্রেন যুদ্ধ কখনও হওয়া উচিত ছিল না। আমি যদি তখন প্রেসিডেন্ট থাকতাম তবে এটি হত না। আমরা এখন যুদ্ধ শেষ করার চেষ্টা করছি। যে কোনোভাবে আমাদের এটি শেষ করতে হবে।’

শান্তি প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে আগামী কয়েক দিনে আরও বৈঠক ও ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় নেতাদের ফোনালাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যুদ্ধ বন্ধে চলমান উদ্যোগের মধ্যেও ইউক্রেনজুড়ে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া।

সেজু