যুক্তরাষ্ট্রকে ‘খুশি’ করতে চীনের সঙ্গে সামরিক সংঘাতের ইঙ্গিত জাপানের

জাপানের পার্লামেন্ট
জাপানের পার্লামেন্ট | ছবি: এখন টিভি
0

যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে ও টোকিওর অর্থনৈতিক দুর্দশা গোপন রাখতে চীনের সঙ্গে সামরিক সংঘাতের ইঙ্গিত দিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে, চীনা নাগরিকদের জাপান সফরে সতর্কতা জারির প্রভাব পড়েছে টোকিওর শেয়ারবাজারে। কমেছে জাপান এয়ারলায়েন্স সহ বেশিরভাগ ট্যুরিস্ট কোম্পানির শেয়ারের দাম।

বিতর্কের শুরু জাপানের নয়া প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির দেশটির পার্লামেন্টে দেয়া একটি ভাষণকে কেন্দ্র করে। দীর্ঘদিন ধরে চলা চীন-তাইওয়ান সংঘাতে জাপান জড়িয়ে পড়তে পারে বলে সংসদে মন্তব্য করেন তাকাইচি। এরপর থেকেই তলানিতে টোকিও- বেইজিং সম্পর্ক। তাকাইচির মন্তব্যকে উস্কানিমূলক বলে আখ্যা দেয়া ছাড়াও এরইমধ্যে বেশ কয়েক দফায় চীনা নাগরিকদের জাপান ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে বেইজিং।

তাকাইচির মন্তব্যকে ভালোভাবে নেয়নি জাপানিজরাও। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি জরিপের তথ্যমতে, জাপানের ৪৪ শতাংশের বেশি মানুষ এরইমধ্যে তাকাইচির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া, বিশেষজ্ঞদের মতে, জাপানের ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি আড়াল করতে তাইওয়ান ইস্যুর আশ্রয় নিয়েছে তাকাইচি।

চীনের গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আইনার ট্যানজেন বলেন, ‘যেহেতু তার কোনো শক্তিশালী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নেই, তাই তিনি সত্যকে আড়াল করছেন। তাকাইচি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু তার ভুলে গেলে চলবে না, জিডিপি বিবেচনায় জাপান একটি ঋণী দেশ’।

এদিকে চীনের ভ্রমণ সতর্কতার প্রভাব পড়েছে জাপানের পর্যটন সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামে। ইসতোন মিতসুকোশি হোল্ডিংস কোম্পানির শেয়ারের দাম ১০ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। এছাড়া, জাপান এয়ারলাইন্সের শেয়ারের দাম কমেছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।

আরও পড়ুন:

গার্ডিয়ান জানায়, গত বছরের মে পর্যন্ত এক লাখের বেশি চীনা শিক্ষার্থী জাপানে পড়াশোনার জন্য গিয়েছিল। এছাড়া, এ বছরের প্রথম আট মাসেই জাপান সফরে যায় ৬৭ লাখেরও বেশি চীনা নাগরিক। তবে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা, চলমান উত্তেজনার ফলে ১৪ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক মুখে পড়বে টোকিও।

এ অবস্থায় সোমবার জাপান সরকারের মুখপাত্র মিনোরু কিহারা জানায় চুক্তি অনুযায়ী জাপান ভ্রমণের ক্ষেত্রে চীনা নাগরিকদের সতর্কতা আরোপ করতে পারে না শি জিন-পিং প্রশাসন।

জাপান সরকারের মুখপাত্র মিনোরু কিহারা বলেন, ‘চীনের ঘোষণা জাপানে পড়াশোনা করতে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীদের সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে। আমি চীনা পক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি’।

তবে জাপান যে যুক্তিই দিক না কেন বিশ্লেষকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন তাকাইচি। কেননা সবশেষ জাপান সফরে দেশটিকে সামরিক খাতের সমৃদ্ধি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে জাপানের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর কথাও ব্যক্ত করেন তাকাইচি।

তাইওয়ান ইস্যুকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছে চীনা পররাষ্ট্র দপ্তর। তাইওয়ান জাপানের পশ্চিম দ্বীপপুঞ্জ থকে ১১০ কিলোমিটার দূরে এবং টোকিওর জ্বালানি আমদানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দরের কাছে অবস্থিত।

এফএস